স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম ২০২৪ (ইসলাম ও আইনি প্রক্রিয়া )

বিবাহ মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়, যা ভালোবাসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং দায়িত্বের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। কিন্তু কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি আসে যখন দুজনের মধ্যে সম্পর্ক রক্ষা করা সম্ভব হয় না।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে, ইসলাম ও বাংলাদেশের আইনে বিবাহ বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) বিভিন্ন নিয়ম ও প্রক্রিয়া রয়েছে, যা প্রতিটি মুসলিমকে মেনে চলা উচিত। 

এই নিবন্ধে আমরা স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম, ইসলামিক দৃষ্টিকোণ এবং বাংলাদেশের আইন অনুসারে কীভাবে ডিভোর্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, তা বিশদভাবে আলোচনা করব।

Rules for Divorcing Wife

স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম ২০২৪

অনেকে তাদের জীবনের প্রয়োজনে জানতে চায় স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম ২০২৪। সাধারণভাবে বাংলাদেশ আইন অনুসারে, ডিভোর্সের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও পদক্ষেপ আছে, অবস্থা ভেদে সেটা ২০২৪ সালে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে, আমরা চেস্টা করেছি মূল বিষয় গুলা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে, চলুন নিচে দেখি কিভাবে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম ২০২৪ দেখি।

১. মিউচুয়াল ডিভোর্স:

  • দস্তাবেজ প্রস্তুতি: উভয় পক্ষের সম্মতি থাকলে, একটি মিউচুয়াল ডিভোর্স পিটিশন তৈরি করতে হবে।
  • ফাইলিং: পিটিশনটি স্থানীয় পরিবার আদালতে জমা দিতে হবে।
  • তিন মাসের সময়কাল: আদালত সাধারণত তিন মাসের সময় দেয়, যাতে দুজন আবার ভেবে দেখতে পারে।
  • শেষ শুনানি: তিন মাস পরে আদালতে উপস্থিত হয়ে ডিভোর্স চূড়ান্ত করা হয়।

২. কন্টেস্টেড ডিভোর্স:

  • আবেদন দাখিল: যদি একজন পক্ষ ডিভোর্স দিতে চায় এবং অন্যজন রাজি না হয়, তবে কন্টেস্টেড ডিভোর্সের জন্য আবেদন করতে হবে।
  • আদালত প্রক্রিয়া: আদালতে শুনানি হবে, যেখানে দুজনের বক্তব্য শোনা হবে।
  • সাক্ষ্য প্রমাণ: প্রমাণ ও সাক্ষ্য উপস্থাপন করতে হতে পারে।
  • ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত: আদালত পরে সিদ্ধান্ত নেবে।

৩. আইনগত সাহায্য:

  • অ্যাডভোকেটের সাহায্য: ডিভোর্স প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে, তাই একজন আইনজীবীর সাহায্য নেওয়া উত্তম।

৪. আরও বিষয়:

  • পৃষ্ঠপোষকতা: ডিভোর্সের সময় পৃষ্ঠপোষকতা, সম্পত্তি এবং শিশুদের যত্নের বিষয়গুলোও আলোচনা করতে হতে পারে।

প্রক্রিয়াটি অবস্থার পরিপেক্ষিতে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে, তাই সম্যসার ধরন অনুসারে একজন আইনজীবি এর সাথে আইনগত পরামর্শ নিলে ভাল হয়।

আরও পড়ুন: স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম 

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ডিভোর্সের নিয়ম

ইসলামে বিবাহ বিচ্ছেদকে একটি পছন্দনীয় নয় এমন কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে এটি অনুমোদিত। কুরআন ও হাদিসে ডিভোর্স সম্পর্কিত নিয়মাবলী সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা প্রতিটি মুসলিমের জন্য পালনীয়।

১. তিন তালাকের নিয়ম

ইসলামে তালাকের প্রক্রিয়া সাধারণত তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে, স্বামী স্ত্রীর প্রতি প্রথম তালাক ঘোষণা করেন। এরপর, স্ত্রীর ইদ্দত (তিন মাসের) সময়কালের মধ্যে পুনরায় মিলিত হওয়ার সুযোগ থাকে।

যদি ইদ্দত সময়কালের মধ্যে পুনর্মিলন না হয়, তাহলে দ্বিতীয় তালাক দেওয়া হয়। একই প্রক্রিয়া অব্যাহত থেকে তৃতীয় তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। তবে, এখনই একবারে তিন তালাক দেওয়া হারাম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

২. ইদ্দত পালনের নিয়ম

তালাকের পর স্ত্রীর জন্য ইদ্দত পালনের সময়কাল নির্ধারিত থাকে, যা তিন মাস বা তিন ঋতুস্রাব পর্যন্ত হতে পারে। ইদ্দতের সময়কাল শেষ হওয়ার পরেই তালাক সম্পূর্ণ কার্যকর হয় এবং স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ করতে পারেন।

৩. মোহরের পরিশোধ

তালাকের সময় স্বামীর দায়িত্ব থাকে স্ত্রীর মোহর (মহরানা) পরিশোধ করা। এটি স্ত্রীর মৌলিক অধিকার এবং ইসলামে এটি পালন করা অত্যাবশ্যক।

৪. তালাকের সাক্ষী

ইসলামে তালাকের সময় দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম পুরুষ সাক্ষী থাকতে হয়। এটি তালাক প্রক্রিয়ার বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়।

আরও জানুন: ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে ২০২৪

আদালতের মাধ্যমে স্বামী যেসব কারণে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন

আদালতের মাধ্যমে স্বামী যে সব কারণে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে:

তালাক-ই-তৌফিজ পদ্ধতিতে তালাক দিতে হলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। শুধুমাত্র মুখে তিন তালাক উচ্চারণ করলেই তা বৈধ বলে গণ্য হবে না। লিখিতভাবে তালাক দিলেও সেটি সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে না; তালাক কার্যকর হতে হলে নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

২. স্বামীর মাধ্যমে তালাক:

স্বামীর ক্ষেত্রে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা বেশি থাকে। কোনো কারণ ছাড়াই স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন।

৩. স্ত্রীর মাধ্যমে তালাক:

স্ত্রীর তালাক দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত। আইনসম্মত কারণ ছাড়া স্ত্রী স্বামীর থেকে বিচ্ছেদ চাইতে পারেন না। তবে, যদি কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্বামীর মাধ্যমে স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেওয়া থাকে, তাহলে স্ত্রী সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।

৪. পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে তালাক:

তালাকের এই পদ্ধতিতে দুইটি প্রকারভেদ আছে:

  • খুলা: স্ত্রীর ইচ্ছার ভিত্তিতে স্ত্রীকে কিছু প্রদানের মাধ্যমে তালাক নেওয়া।
  • মুবারত: উভয়ের সম্মতিতে তালাকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

৫. আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ:

তালাক নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করে বিচ্ছেদ কার্যকর করা যায়।

তালাকের প্রক্রিয়া:

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, স্বামী বা স্ত্রী যেকোনো তালাক পদ্ধতি গ্রহণের পর নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে নোটিশ পাঠাতে হবে।

সেই নোটিশের একটি কপি তালাকপ্রাপ্ত ব্যক্তিকেও দিতে হবে। যদি কেউ এই নোটিশ প্রদানের নিয়ম লঙ্ঘন করে, তাহলে তাকে এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি পেতে হতে পারে। তবে, নোটিশ প্রদান না করলেও তালাক বাতিল হবে না।

চেয়ারম্যান নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে উভয় পক্ষের মধ্যে পুনর্মিলনের চেষ্টা করবেন। যদি সমঝোতা না হয় এবং ৯০ দিনের মধ্যে তালাক প্রত্যাহার না করা হয়, তাহলে তালাক কার্যকর হবে।

এ সময়কালে স্বামী স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করবেন। তবে, স্ত্রী যদি তালাক ঘোষণার সময় অন্তঃসত্ত্বা থাকে, তাহলে সন্তানের জন্মের পর ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী, কাজী নির্ধারিত ফি নিয়ে তালাক রেজিস্ট্রি করবেন এবং ফি ছাড়া প্রত্যয়ন কপি প্রদান করবেন।

নতুন আর্টিকেল: ডিভোর্স পেপার লেখার নিয়ম

স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্ন: ডিভোর্স কিভাবে দিতে হয়?

উত্তর: যদি কোনো তালাক পূর্বে প্রত্যাহার না করা হয়, তবে তা সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে নোটিশ দেওয়ার ৯০ দিন পর কার্যকর হবে। এই অধ্যাদেশের ৭(১) ধারার অধীনে, তালাক কার্যকর হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ হতে হবে:

প্রথমত, তালাকের ঘোষণা; দ্বিতীয়ত, তালাকের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানকে নোটিশ প্রদান; এবং তৃতীয়ত, নোটিশের একটি কপি স্ত্রীর কাছে পৌঁছানো।

প্রশ্ন: স্ত্রী ডিভোর্স দিলে কি দেনমোহরের টাকা পাবে?

উত্তর: যদি স্ত্রী তালাক দেন, তবুও তিনি দেনমোহর প্রাপ্য হবেন। বিবাহবিচ্ছেদ যেভাবেই হোক না কেন, দেনমোহরের টাকা স্ত্রীর জন্য অবশ্যই নির্ধারিত।

তবে নিকাহনামায় যদি কোনো উশুল উল্লেখ করা থাকে, তাহলে বকেয়া পরিমাণ তিনি পাবেন। বিয়ে চলমান থাকাকালীন, স্বামী তার স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ভরণপোষণ দেওয়ার দায়িত্বে বাধ্য থাকবেন।

প্রশ্ন: ডিভোর্সের কতদিন পর মেয়েরা বিয়ে করতে পারে?

উত্তর: আইন মেনে ডিভোর্স সম্পন্ন হলে, তা একতরফা হোক বা দুই পক্ষের সম্মতিতে, যেকোনো সময় পুনরায় বিয়ে করা সম্ভব। তবে নারীদের ক্ষেত্রে, খুলা তালাক সম্পন্ন হওয়ার পর পুনরায় বিয়ে করার জন্য তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে।

উপসংহার

তালাক একটি সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ এবং বাংলাদেশের আইনের আলোকে পালন করতে হয়। বিবাহ বিচ্ছেদ কখনোই আনন্দদায়ক নয়, তবে কিছু পরিস্থিতিতে এটি অবশ্যম্ভাবী হতে পারে।এমন পরিস্থিতিতে, সঠিক নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডিভোর্সের প্রক্রিয়াটি সবসময় ভালোভাবে বিবেচনা করে এবং উভয় পক্ষের সম্মান বজায় রেখে সম্পন্ন করা উচিত। এভাবে, তালাক প্রক্রিয়াটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়, যা উভয়ের জন্য কম ক্ষতিকর হয়।

আজকের আলোচনার বিষয় ছিল স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আশাকরি উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আপনারা উপকৃত হবেন। 

আরও জানুন:

DISCLAIMER

এই ব্লগ পোস্ট আর্টিকেল এবং আমাদের স্যোসাল মিডিয়া একাউন্ট এর তথ্য সম্পূর্ন নিরাপদ, যাচাই করা, বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে রিসার্স করে সবার উপকারের জন্য নেওয়া হয়েছে। আমরা বন্ধ পরিকর আপনাদের কে নির্ভুল নিতে, তারপর ও যদি আপনাদের কোন অভিযোগ ও কোন বেপার জানার থাকে আমাদের কে মেইল করুন [email protected] ধন্যবাদ।

WhatsApp চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
Telegram চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
 Facebook Page এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us 
Quora তে আমাদের কে ফলো করুন- Follow Us
Pinterest এ আমাদের কে ফলো করুন- Follow Us
Twitter এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
Web Stories এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন Follow Us

 

Author

  • Ruthy Musa

    আমি রুথি মুসা, Wikiofpro.com-এর একজন লেখক। আমি পাঠকদের তথ্য প্রদান এবং অনুপ্রাণিত করার জন্য সাধারণ বিষয়গুলি গভীরভাবে শেয়ার করি। আমার লক্ষ্য হল সঠিক তথ্য এবং ব্যাপক জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা, যাতে তারা আরও সাবলীল এবং সফলভাবে নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে পারে।

    View all posts

Leave a Comment