দুইজন মানুষ তাদের জীবনের বাকিটা সময় একসঙ্গে কাটানোর প্রতিজ্ঞা নিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে বাস্তবতা সবসময় সেই প্রতিজ্ঞাকে সফল হতে দেয় না; কখনো কখনো বিভিন্ন পরিস্থিতি তাদের মধ্যে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কখনো ছোটখাটো সমস্যার সমাধান সহজেই পাওয়া যায়, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এই অশান্তি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তা ক্রমাগত বেড়েই চলে।
ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদ একটি গুরুতর এবং জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ইসলামিক শাস্ত্র অনুযায়ী, বিবাহ বিচ্ছেদ বৈধ হলেও এটি আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়। কিন্তু যখন বিবাহিত জীবন সমস্যাযুক্ত হয়ে ওঠে এবং অন্য কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন ডিভোর্সই শেষ উপায় হয়ে দাঁড়ায়।
এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য ইসলামী আইন এবং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কিছু নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং এতে সংশ্লিষ্ট আইনি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম ২০২৪
স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম কি সেই বিষয়ে কয়েকটি পদক্ষেপ আছে নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো।
স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হতে পারে এবং এটি নির্ভর করে আপনার ধর্মীয় এবং স্থানীয় আইন অনুযায়ী। সাধারণভাবে, প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারে:
প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করুন: আপনার বিবাহের নথি, স্বামী/স্ত্রীর তথ্য, এবং সন্তানদের তথ্য (যদি থাকে)।
আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করুন: একজন আইনজীবী আপনার মামলা পরিচালনা করতে এবং প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে।
ডিভোর্সের কারণ নির্ধারণ করুন: বিভিন্ন ধরনের ডিভোর্স আছে, যেমন মিউচুয়াল কনসেন্ট (দ্বিপাক্ষিক সম্মতিতে) বা কন্টেস্টেড (বিরোধপূর্ণ) ডিভোর্স।
আবেদন পত্র প্রস্তুত করুন: ডিভোর্সের জন্য আবেদন পত্র প্রস্তুত করতে হবে এবং আদালতে জমা দিতে হবে।
আদালতে শুনানি: আদালতে শুনানির জন্য উপস্থিত হতে হবে, যেখানে আপনার আবেদন এবং স্বামীর বক্তব্য শুনা হবে।
ফাইনাল ডিভোর্স অর্ডার: সমস্ত শুনানি শেষে আদালত যদি আপনার আবেদন মঞ্জুর করে, তাহলে ফাইনাল ডিভোর্স অর্ডার পাবেন।
এটি একটি সাধারণ ধারনা। আপনার বিশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে, তাই স্থানীয় আইন ও নিয়মাবলী সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। নিচে আর কিছু বেপার আছে যেটার মাধ্যমে আপনি স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম ২০২৪ নিয়ে জানতে পারবেন।
স্ত্রীর করণীয়:
ইসলামে নারীদের জন্য একটি বিশেষ অধিকার এবং স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। বিবাহের সময় যেকোনো নারী ইচ্ছা করলে স্বামীর সঙ্গে একটি শর্ত স্থাপন করতে পারে, যা তাকে বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার প্রদান করে।
অর্থাৎ, নারী এই শর্তে স্বামীকে বলতে পারে যে, যদিও সে স্বেচ্ছায় বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে, তবে পরবর্তীতে যেকোনো সময়ে সে চাইলে স্বামী তাকে তালাক দেওয়ার অধিকার প্রদান করবে।
যদি এই শর্তে বিবাহ সম্পন্ন হয়, তাহলে নারী সেই অধিকার প্রয়োগ করে স্বামীর সম্মতি ছাড়াই তালাক গ্রহণ করতে পারে এবং বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৫২৬২; ফাতহুল কাদির, ৩/৪২৭)
খোলা তালাক:
যদি কোনো নারী বিয়ের আগে এই শর্ত না স্থাপন করে, তবে পরবর্তীতে সংসারে বনিবনা না হলে ইসলামে স্ত্রীর জন্য আরেকটি উপায় রাখা হয়েছে। এই উপায়কে বলা হয় “খোলা তালাক”।
এতে স্ত্রী স্বামীকে বুঝিয়ে তালাকের জন্য রাজি করাতে পারে, অথবা কোনো বিনিময়ের মাধ্যমে স্বামীকে সম্মতি নিতে পারে।
যেমন, স্ত্রী বলতে পারে যে, “তুমি হয়তো আমাকে বিয়ের সময় মহর, অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য খাতে অনেক খরচ করেছো, তাই তুমি এই বিবাহ ভাঙতে চাইছো না।
আমি প্রয়োজনে তোমার কিছু খরচ পুষিয়ে দেব, কিন্তু আমাকে তালাক দিয়ে দাও।” এই প্রক্রিয়াকেই “খোলা তালাক” বলা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৫২৭৩)
আইনি প্রক্রিয়া:
যদি স্বামী খোলা তালাকের জন্য সম্মত না হন, তবে স্ত্রী আদালতে মামলা করতে পারেন। যৌক্তিক কারণ প্রদর্শন করে এবং স্বামীর আপত্তি সত্ত্বেও, বিচারকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ সম্ভব হতে পারে। (শরহুস সগির, দরদির, ২/৭৪৫; কিফায়াতুল মুফতি, ৬/২৫২)
আরও জানুন: ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে
তালাকের ক্ষমতা স্বামীর হাতে
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে যদি বনিবনা না থাকে এবং কোনোভাবে একসঙ্গে থাকা সম্ভব না হয় অথবা যদি কোনো অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হন, তাহলে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। তবে ইসলামে বিবাহবিচ্ছেদের পথ অবলম্বনের আগে মীমাংসার প্রচেষ্টা গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে: “যদি তাদের মধ্যে বিরোধের আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে স্বামীর পরিবারের একজন এবং স্ত্রীর পরিবারের একজন সালিস নিযুক্ত করা হবে। যদি তারা উভয়ে মীমাংসার চেষ্টা করে, তবে আল্লাহ তাদের মধ্যে সমাধানের উপায় সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সব বিষয়ের অবগত।” – (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩৫)
যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমেও সমাধান না আসে এবং একসঙ্গে থাকার কোনো উপায় না থাকে, তাহলে প্রয়োজনীয় ও যৌক্তিক কারণে স্বামী তালাক দিতে পারেন। একইভাবে স্ত্রীও তালাকের আবেদন করতে পারেন। তবে ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, তালাকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষমতা স্বামীর হাতে দেওয়া হয়েছে।
স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং উত্তর
প্রশ্ন: ডিভোর্স দিতে কত দিন সময় লাগে?
উত্তর: একজন মুসলিম পুরুষ মৌখিক বা লিখিতভাবে তার স্ত্রীর কাছে বিবাহবিচ্ছেদের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন, যা তালাক নামে পরিচিত। বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ দেওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে যদি স্বামী-স্ত্রী কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারেন, তাহলে বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর হবে।
প্রশ্ন: ডিভোর্স দিতে কত টাকা খরচ হয়?
উত্তর: ফলে, মোট রেজিস্ট্রি ফি হবে ৫২০০ টাকা। তালাক নিবন্ধনের জন্য কত ফি ধার্য করা হয়েছে? মুসলিম বিবাহ ও তালাক বিধিমালা, ২০০৯-এর ২১ নম্বর বিধি অনুযায়ী, তালাক নিবন্ধনের জন্য রেজিস্ট্রার ৫০০ টাকা ফি নিতে পারেন।
এর পাশাপাশি, নকল প্রাপ্তি ফি ৫০ টাকা, যাতায়াতের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা, এবং তল্লাশি ফি ১০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
প্রশ্ন: ডিভোর্স দিতে হলে কি করতে হবে?
উত্তর: যদি স্বামী-স্ত্রী তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯৭৪ অনুযায়ী, তাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে নোটিশ জমা দিতে হবে।
এই নোটিশের একটি কপি স্বামী বা স্ত্রীর কাছেও পাঠাতে হবে। নোটিশ পাওয়ার পর, চেয়ারম্যান বা মেয়র ৩০ দিনের মধ্যে তাদের মধ্যে সমঝোতার প্রচেষ্টা করবেন।
প্রশ্ন: মেয়েরা ডিভোর্স দিলে কি দেনমোহর পাবে?
উত্তর: মেয়েরা যদি ডিভোর্স (“খুলা”) নেয়, তবে সাধারণত দেনমোহর পাওয়ার অধিকার থাকে না। খুলার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে, স্ত্রী সাধারণত স্বামীর দেওয়া দেনমোহর বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা ফিরিয়ে দিতে হয়।
এটি একটি প্রথাগত নিয়ম, যা ইসলামিক আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে, এটি নির্ভর করে উভয়ের মধ্যে সমঝোতার উপর, এবং স্থানীয় আইন ও বিচারব্যবস্থাও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, বিশেষ ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা দিতে পারে।
প্রশ্ন: মেয়েরা তালাক দিতে পারবে কি না?
উত্তর: হ্যাঁ, মেয়েরা তালাক দিতে পারে। ইসলামিক আইন অনুযায়ী, নারীরাও বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার রাখে, যা “খুলা” নামে পরিচিত। খুলার মাধ্যমে একজন মুসলিম নারী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারেন, তবে এ ক্ষেত্রে তাকে সাধারণত স্বামীর দেওয়া মোহর বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা ফেরত দিতে হতে পারে।
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে, নারীর জন্যও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে নোটিশ দিতে হবে এবং প্রক্রিয়াটি আইনি নিয়ম অনুযায়ী সম্পন্ন হবে।
উপসংহার
ডিভোর্স একটি কঠিন ও সংবেদনশীল প্রক্রিয়া, যা জীবনের মোড় পরিবর্তন করতে পারে। এটি নেয়ার আগে সবদিক বিবেচনা করা উচিত এবং যথাসম্ভব সমঝোতার চেষ্টা করা উচিত। তবে, যদি ডিভোর্সই একমাত্র সমাধান হয়, তাহলে ইসলামিক ও আইনগত নিয়ম মেনে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা উচিত।
আত্মনির্ভরশীল হয়ে এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রেখে, ডিভোর্সের পরের জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালিত করা সম্ভব। আজকের আলোচনার বিষয় ছিল স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম কি সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা। আশাকরি উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আপনি উপকৃত হবেন।
আরও জানুন:
- কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না?
- মামলা থাকলে কি সরকারি চাকরি হয়?
- বাংলাদেশ থেকে ভারতে মেডিকেলে পড়ার যোগ্যতা ২০২৪
- মামলা থাকলে কি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যায়?
DISCLAIMER
এই ব্লগ পোস্ট আর্টিকেল এবং আমাদের স্যোসাল মিডিয়া একাউন্ট এর তথ্য সম্পূর্ন নিরাপদ, যাচাই করা, বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে রিসার্স করে সবার উপকারের জন্য নেওয়া হয়েছে। আমরা বন্ধ পরিকর আপনাদের কে নির্ভুল নিতে, তারপর ও যদি আপনাদের কোন অভিযোগ ও কোন বেপার জানার থাকে আমাদের কে মেইল করুন [email protected] ধন্যবাদ।
WhatsApp চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
Telegram চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
Facebook Page এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
Quora তে আমাদের কে ফলো করুন- | Follow Us |
Pinterest এ আমাদের কে ফলো করুন- | Follow Us |
Twitter এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
Web Stories এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন | Follow Us |