কোর্ট ম্যারেজ করার নিয়ম ২০২৫( কি কি লাগে, খরচ কত)

কোর্ট ম্যারেজ – পালিয়ে বিয়ে, আইনি বিবাহ বা আইনত স্বীকৃত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার এই প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

কিন্তু কোর্ট ম্যারেজ করার নিয়ম অনেকের কাছেই অস্পষ্ট এবং বিভ্রান্তিকর হতে পারে। আপনি কি কখনও ভেবেছেন, কোর্ট ম্যারেজ কি শুধুমাত্র আদালতে গিয়ে বিয়ে করা?

নাকি এর আরও জটিলতা এবং নিয়ম আছে? আজকের লেখায় আমরা এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জানবো।

কোর্ট ম্যারেজ অনেক ক্ষেত্রে পরিবারিক বাধা অথবা বৈধতার প্রশ্নে মানুষকে একটি নিরপেক্ষ এবং আইনি পথ দেখায়।

তবে, কোর্ট ম্যারেজ করার নিয়ম এবং এর জন্য যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি। চলুন, একে একে জেনে নিই কোর্ট ম্যারেজের নিয়মাবলী।

rules for court marriage near dhaka

কোর্ট ম্যারেজ করার নিয়ম ২০২৫ -ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া

কোর্ট ম্যারেজ সাধারণত একটি আইনগত প্রক্রিয়া, যেখানে বিবাহের জন্য কোনও বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রয়োজন হয় না।

এটি একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলা স্বেচ্ছায় এবং আইনি শর্ত মেনে বিয়ে করার প্রক্রিয়া। কোর্ট ম্যারেজ করার নিয়ম বিভিন্ন ধাপে বিভক্ত এবং এই প্রক্রিয়াটি আইন অনুযায়ী সম্পন্ন করতে হয়।

কোর্ট ম্যারেজ করার প্রাথমিক প্রক্রিয়া নিচে দেয়া হলো:

ধাপ ১: আইনজীবীর কাছে যোগাযোগ করা

প্রথমে, একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর কাছে যেতে হবে। তিনি আপনাকে কোর্ট ম্যারেজের জন্য প্রাথমিক পরামর্শ দেবেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও হলফনামার ব্যবস্থা করবেন। এই হলফনামায় লিখিত থাকবে যে, আপনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং স্বেচ্ছায় বিয়ে করতে চান।

ধাপ ২: হলফনামা প্রস্তুতি এবং সই

আইনজীবী একটি হলফনামা তৈরি করবেন, যা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরিত হতে হবে। এটি প্রমাণ করবে যে আপনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং নিজ ইচ্ছায় বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ধাপ ৩: কাবিননামা সম্পাদন

হলফনামার পর, উভয় পক্ষকে কাজী বা ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কাজী আপনার কাবিননামায় সই করবেন, এবং এটিই হবে আপনার বিয়ের মূল আইনি দলিল।

ধাপ ৪: সাক্ষী এবং কাগজপত্রের যাচাই

বিয়ের সময় আপনার বয়স প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদ প্রয়োজন। এছাড়া, কাবিননামার সামনে উপস্থিত দুইজন সাক্ষীও থাকতে হবে।

ধাপ ৫: রেজিস্ট্রেশন এবং দাপ্তরিক প্রক্রিয়া

কাবিননামা সই হওয়ার পর, এটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এর মাধ্যমে বিয়ে আইনিভাবে স্বীকৃত হয়ে যাবে।

court marriage rules in bangladesh bangla

আরও জানুন:

কোর্ট ম্যারেজের জন্য কি কি প্রয়োজন?

  1. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া: কোর্ট ম্যারেজ করতে হলে, উভয় পক্ষেরই প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। মেয়ের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং ছেলের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে।
  2. স্বেচ্ছায় বিয়ে: কোর্ট ম্যারেজে উভয় পক্ষকে স্বেচ্ছায়, কোনো চাপ ছাড়াই বিয়ে করতে হবে। আপনার পছন্দের জীবনসঙ্গীকে বিয়ে করার জন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের চাপ প্রযোজ্য নয়।
  3. স্বীকৃত সাক্ষী: কোর্ট ম্যারেজের জন্য দুই জন সাক্ষী প্রয়োজন। একটি পুরুষ সাক্ষী এবং একাধিক মহিলা সাক্ষী থাকতে পারে।
  4. আইডি প্রমাণপত্র: কোর্ট ম্যারেজ করতে গেলে, উভয় পক্ষের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ বা ছবি সহ প্রমাণপত্র লাগবে।
  5. আইনজীবীর সহায়তা: কোর্ট ম্যারেজের জন্য সাধারণত একজন আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হয়। আইনজীবী সাধারণত উভয় পক্ষের জন্য একটি হলফনামা তৈরি করেন, যেখানে উল্লিখিত থাকে যে, উভয় পক্ষ স্বেচ্ছায় এবং আইনি দিক থেকে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে করতে সম্মত।

কোর্ট ম্যারেজের খরচ: কতটা খরচ হয়?

কোর্ট ম্যারেজের খরচ দেশে দেশে পরিবর্তিত হতে পারে, তবে সাধারণভাবে এটি বেশ কম খরচে করা যায়। প্রধান খরচগুলো হলো:

  1. আইনজীবীর ফি: সাধারণত একজন আইনজীবী কোর্ট ম্যারেজের প্রক্রিয়া পরিচালনা করার জন্য ২০০-৫০০ টাকা ফি নেন।
  2. কাবিননামার ফি: কাজী বা ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কর্তৃক কাবিননামার জন্য খরচ ৫০০-১৫০০ টাকা হতে পারে।
  3. নোটারি পাবলিক ফি: যদি নোটারি পাবলিকের সাহায্য নেন, তাহলে তার জন্য ৫০০-১০০০ টাকা খরচ হবে।
  4. মোট খরচ: এই সব খরচের পর, একটি কোর্ট ম্যারেজের মোট খরচ প্রায় ১০০০-৩০০০ টাকা হতে পারে।

আরও জানুন: কোর্ট ম্যারেজ বাতিল করার নিয়ম

কোর্ট ম্যারেজের আইনগত বৈধতা:

কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে হওয়ার পর এটি আইনের দৃষ্টিতে পুরোপুরি বৈধ থাকে। আপনি যদি কাউকে বিয়ে করেন এবং আইনের মাধ্যমে সেটা স্বীকৃত থাকে, তবে সে বিয়ের প্রমাণ হিসেবে কাবিননামাটি ব্যবহৃত হতে পারে।

কোর্ট ম্যারেজের সুবিধা:

  • আইনি স্বীকৃতি: কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে আপনার বিয়ে আইনি দৃষ্টিতে বৈধ থাকে এবং কোনও ধরনের আইনি জটিলতা এড়ানো যায়।
  • গোপনীয়তা: আপনি চাইলে আপনার বিয়েটি গোপন রাখতে পারেন এবং এটি পরবর্তী আইনি ঝামেলা থেকে আপনাকে রক্ষা করে।
  • পারিবারিক সম্মতি ছাড়াই বিয়ে: যদি আপনার পরিবার বিয়ে করতে না চায়, তাহলে আপনি কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে আইনি ভাবে বিয়ে করতে পারবেন।

কোর্ট ম্যারেজের বিপরীতে কিছু সতর্কতা:

  1. পারিবারিক সমস্যা: অনেক সময়, কোর্ট ম্যারেজ করার কারণে পরিবারের সদস্যরা খুশি হন না, যা পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি করতে পারে।
  2. আইনি জটিলতা: কিছু পরিস্থিতিতে, কোর্ট ম্যারেজের পর আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, যেমন নারী নির্যাতন বা অপহরণ মামলা।
  3. ভুল সিদ্ধান্তের পরিণতি: কখনও কখনও, অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের মধ্যে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া মানুষের জীবনে বড় আঘাত হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কোর্ট ম্যারেজ vs পালিয়ে বিয়ে:

অনেকেই কোর্ট ম্যারেজকে পালিয়ে বিয়ের সাথে তুলনা করে থাকেন। তবে, কোর্ট ম্যারেজ সম্পূর্ণ আইনগত এবং স্বীকৃত প্রক্রিয়া, যেখানে পালিয়ে বিয়ে অনেক সময় আইনি ঝামেলা তৈরি করে।

কোর্ট ম্যারেজ করলে কোনও আইনি ঝামেলা নেই এবং ভবিষ্যতে সমস্যার সমাধান পাওয়া সহজ।

কোর্ট ম্যারেজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আইনি বিষয়গুলো:

  • আইনের শর্ত মেনে বিয়ে: কোর্ট ম্যারেজের জন্য আইনের শর্তগুলি মেনে চলা জরুরি, নতুবা বিয়ে বৈধ হবে না।
  • নাবালক বয়স: যদি মেয়ে বয়সে নাবালিকা (১৮ বছরের কম) হয়, তবে কোর্ট ম্যারেজ করতে গেলে আইনগত জটিলতা দেখা দিতে পারে।

কোর্ট ম্যারেজ: আপনার সঠিক সিদ্ধান্ত?

কোর্ট ম্যারেজ করা কঠিন কাজ নয়, তবে সঠিক তথ্য এবং আইনি পরামর্শ ছাড়া এটি করা উচিত নয়। যখন আপনি আইনি বা পারিবারিক সমস্যার মুখোমুখি হন, তখন কোর্ট ম্যারেজ হতে পারে আপনার জন্য একটি সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য উপায়।

marriage law in bangladesh

কোর্ট ম্যারেজ করার নিয়ম নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর।

কোর্ট ম্যারেজ কি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য?

হ্যাঁ, কোর্ট ম্যারেজ শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলার জন্য।

কোর্ট ম্যারেজ করার জন্য কি অভিভাবকের সম্মতি প্রয়োজন?

না, অভিভাবকের সম্মতি প্রয়োজন না হলেও এটি সম্পর্কের শান্তি এবং পরিবারের সমর্থন পেতে সহায়ক হতে পারে।

কোর্ট ম্যারেজের জন্য কি নির্দিষ্ট স্থান দরকার?

কোর্ট ম্যারেজ সাধারণত একটি কাজীর মাধ্যমে করা হয়, কিন্তু এটি আদালতে গিয়ে করতে হয় না।

উপসংহার:

কোর্ট ম্যারেজ একটি আইনানুগ প্রক্রিয়া, যা আপনার বিয়েকে বৈধতা প্রদান করে। তবে, এটি করার আগে সমস্ত আইনি দিক এবং সম্পর্কিত ঝামেলা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।

পালিয়ে বিয়ে করার জন্য কোনোভাবেই অস্থির সিদ্ধান্ত না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সবসময় আইনি পরামর্শ নিয়ে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কোনও আইনি জটিলতার মুখোমুখি না হতে হয়।

আরও জানুন:

DISCLAIMER

এই ব্লগ পোস্ট আর্টিকেল এবং আমাদের স্যোসাল মিডিয়া একাউন্ট এর তথ্য সম্পূর্ন নিরাপদ, যাচাই করা, বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে রিসার্স করে সবার উপকারের জন্য নেওয়া হয়েছে। আমরা বন্ধ পরিকর আপনাদের কে নির্ভুল নিতে, তারপর ও যদি আপনাদের কোন অভিযোগ ও কোন বেপার জানার থাকে আমাদের কে মেইল করুন [email protected] ধন্যবাদ।

WhatsApp চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
Telegram চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
 Facebook Page এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us 
Quora তে আমাদের কে ফলো করুন- Follow Us
Pinterest এ আমাদের কে ফলো করুন- Follow Us
Twitter এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
Web Stories এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন Follow Us

Author

  • Ruthy Musa

    আমি রুথি মুসা, Wikiofpro.com-এর একজন লেখক। আমি পাঠকদের তথ্য প্রদান এবং অনুপ্রাণিত করার জন্য সাধারণ বিষয়গুলি গভীরভাবে শেয়ার করি। আমার লক্ষ্য হল সঠিক তথ্য এবং ব্যাপক জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা, যাতে তারা আরও সাবলীল এবং সফলভাবে নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে পারে।

    View all posts

Leave a Comment