সরকারি চাকরি বাংলাদেশের অনেকের স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণের জন্য শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেই হবে না শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাও জরুরি। সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করার সময় প্রত্যেক প্রার্থীকেই একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
এই পরীক্ষায় প্রার্থীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের একটি বিস্তারিত মূল্যায়ন করা হয়। সরকারি চাকরি সাধারণত জনসেবার সাথে জড়িত। একজন সরকারি কর্মচারীকে দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এবং বিভিন্ন চাপ সামলাতে হয়।
তাই নিশ্চিত করা জরুরি যে এই চাকরিতে যোগদানকারী ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিকভাবে এই দায়িত্ব পালন করার উপযোগী। আজকের পোস্টে আমরা কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। অতএব দেরী না করে চলুন শুরু করি।
কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না?
সরকারি চাকরি অনেকের একটি স্বপ্ন। দেশের সেবা করার পাশাপাশি সামাজিক মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা লাভের জন্য অনেকেই সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকেন। কিন্তু সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য শুধুমাত্র শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেই হবে না স্বাস্থ্যগত যোগ্যতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেননা সরকারি চাকরি করতে হলে সাধারণত দায়িত্বশীল এবং চাপ সহিষ্ণু হতে হয়। সরকারি চাকরির জন্য যেসব রোগ বা শারীরিক অবস্থা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে সেগুলো সাধারণত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা থাকে। তবে সাধারণভাবে নিম্নলিখিত রোগ বা অবস্থাগুলো সরকারি চাকরির জন্য অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হতে পারে:
- হৃদরোগ
- ডায়াবেটিস
- কিডনি রোগ
- যকৃতের রোগ
- দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির ত্রুটি
- মানসিক অসুস্থতা
- সংক্রামক রোগ
- শারীরিক অক্ষমতা
সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করার সময় আবেদনকারীর উচিত নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা। কোনো ধরনের রোগ বা অসুস্থতা লুকিয়ে রাখা উচিত নয়। কিছু ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যক্তির কোনো নির্দিষ্ট রোগ থাকে তবেও তাকে সরকারি চাকরি দেওয়া হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ যদি কোনো ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি কম হয় তবে তাকে এমন কোনো চাকরি দেওয়া হতে পারে যেখানে দৃষ্টিশক্তির প্রয়োজন কম।
আরও পড়ুনঃ মামলা থাকলে ও এখন বিদেশ যেতে পারবেন, নতুন নিয়ম জানুন
স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে। যেমন সুস্থ কর্মচারীই দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারে। কোনো রোগ বা অসুস্থতা কর্মচারীর কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং সেইসাথে সরকারি কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত কর্মচারী অন্যদেরও আক্রান্ত করতে পারে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এ ধরনের ঝুঁকি কমানো যায়। কিছু ধরনের শারীরিক অক্ষমতা বা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা কর্মচারীকে তার দায়িত্ব পালনে বাধা দিতে পারে এবং সরকারি সম্পদ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
কোথায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়?
সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে করা হয়। এই হাসপাতালগুলো সাধারণত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাথে সম্পর্কিত থাকে। নিচে উক্ত হাসপাতাল গুলো উল্লেখ ও বর্ণনা করা হলো:
- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার একটি প্রধান কেন্দ্র। এই হাসপাতালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যেমন: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, ভূমি সংস্কার বোর্ড, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ইত্যাদির কর্মচারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
- সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা: এই হাসপাতালে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড, বিসিএস প্রশাসন একাডেমি, রাষ্ট্রপতির কার্যালয় ইত্যাদির কর্মচারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
- জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর: এই হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ইত্যাদির কর্মচারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
- অন্যান্য হাসপাতাল: উপরোক্ত হাসপাতালগুলো ছাড়াও অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজেও সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হতে পারে।
জটিল রোগ থাকলে করণীয়
যদি আপনার কোনো জটিল রোগ থাকে তাহলে নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রথমেই আপনাকে নিজের রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার রোগ কতটা নিয়ন্ত্রণে আছে কী ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করছেন এবং ভবিষ্যতে কোন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে এই সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। নিচে কোন জটিল রোগ থাকলে আপনি কি কি করতে পারেন তা উল্লেখ করা হলো।
১. চিকিৎসকের পরামর্শ
সর্বপ্রথম আপনার চিকিৎসকের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করুন। তিনি আপনার রোগের অবস্থা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানাবেন এবং আপনার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেবেন।
২. রোগ নিয়ন্ত্রণ
আপনার রোগ যদি নিয়ন্ত্রণযোগ্য হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এতে আপনার রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং আপনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।
৩. সরকারি নিয়মাবলী জানুন
সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করার আগে সেই চাকরির জন্য নির্ধারিত শারীরিক যোগ্যতার বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন। প্রতিটি চাকরির জন্য শারীরিক যোগ্যতার মানদণ্ড আলাদা হতে পারে।
৪. বিশেষ সুবিধা
অনেক ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরা সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করার সময় বিশেষ সুবিধা পেতে পারেন। এই বিষয়ে আপনার চিকিৎসক বা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে যোগাযোগ করুন।
৫. অন্যান্য পেশা
যদি আপনার রোগের কারণে সরকারি চাকরি করা সম্ভব না হয় তাহলে আপনি আপনার যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য পেশা বেছে নিতে পারেন। আজকাল অনেক পেশাতেই শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরা সফলভাবে কাজ করছেন।
প্রায়শই জিজ্ঞেসিত প্রশ্নসমূহ
সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য কোন কোন রোগ নিষিদ্ধ?
সরকারি চাকরির জন্য নির্দিষ্ট কিছু রোগকেই নিষিদ্ধ করা হয়। সাধারণত যেসব রোগ কর্মক্ষমতা বা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে সাধারণো সেই রোগ গুলোকেই বিবেচনা করা হয়।
কি ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয় সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য?
স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সাধারণত শারীরিক পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা, মূত্র পরীক্ষা, চক্ষু পরীক্ষা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। নির্দিষ্ট পরীক্ষার তালিকা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকে।
কোন কোন রোগের জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে?
যদি চাকরিতে যোগদানের পর কোনো কর্মচারীর কোনো গুরুতর রোগ ধরা পড়ে এবং সেই রোগের কারণে তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হন তাহলে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হতে পারে।
এইচআইভি পজিটিভ হলে কি সরকারি চাকরি পাওয়া যাবে না?
এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিরাও সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে চাকরির প্রকৃতি বিবেচনা করে নির্দিষ্ট দায়িত্ব থেকে তাদের বাদ দেওয়া হতে পারে।
হৃদরোগ থাকলে কি সরকারি চাকরি পাওয়া যাবে না?
হৃদরোগের ধরন এবং তীব্রতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হালকা ধরনের হৃদরোগ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব।
ডায়াবেটিস থাকলে কি সরকারি চাকরি পাওয়া যাবে না?
ডায়াবেটিস থাকলেও সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব। তবে রোগটি কতটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেটি বিবেচনা করা হয়।
মনোরোগ থাকলে কি সরকারি চাকরি পাওয়া যাবে না?
মনোরোগের ধরন এবং তীব্রতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদি রোগটি চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত না করে তাহলে সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব।
সরকারি চাকরির জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল কত দিনের মধ্যে জানা যাবে?
স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে জানা যায়।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় কোন কোন কাগজপত্র লাগবে?
স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় আবেদনপত্রের ফটোকপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসমূহের ফটোকপি ইত্যাদি কাগজপত্র লাগতে পারে।
শেষ কথা
সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য স্বাস্থ্য যোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যক্তিকে তার নিজস্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনো রোগ থাকলেই সরকারি চাকরি পাওয়া যাবে না এমন নয়। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব।
তাই যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করার আগে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত স্বাস্থ্য যোগ্যতা ভালোভাবে পড়ুন।
সরকারি চাকরি সম্পর্কে আপনার আরোও কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
আর ও পড়ুনঃ
- বাংলাদেশ থেকে ফিনল্যান্ড যাওয়ার উপায়
- বাংলাদেশ থেকে আইসল্যান্ড যাওয়ার উপায়
- বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্ক যাওয়ার উপায়
- IELTS ছাড়া ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়
- বাংলাদেশ থেকে এস্তোনিয়া ভিসা কিভাবে পাওয়া যায়
DISCLAIMER
এই ব্লগ পোস্ট আর্টিকেল এবং আমাদের স্যোসাল মিডিয়া একাউন্ট এর তথ্য সম্পূর্ন নিরাপদ, যাচাই করা, বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে রিসার্স করে সবার উপকারের জন্য নেওয়া হয়েছে। আমরা বন্ধ পরিকর আপনাদের কে নির্ভুল নিতে, তারপর ও যদি আপনাদের কোন অভিযোগ ও কোন বেপার জানার থাকে আমাদের কে মেইল করুন [email protected] ধন্যবাদ।
WhatsApp চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
Telegram চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
Facebook Page এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
Quora তে আমাদের কে ফলো করুন- | Follow Us |
Pinterest এ আমাদের কে ফলো করুন- | Follow Us |
Twitter এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
Web Stories এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন | Follow Us |