অস্ট্রেলিয়া এক অসাধারণ দেশ যেখানে বিস্তীর্ণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উন্নত জীবনযাত্রা এবং শিক্ষার উচ্চ মান বিদ্যমান। অনেকেই বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ, শিক্ষা কিংবা কাজের জন্য যেতে চান।
এই নিবন্ধে আমরা বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায়, ভিসার প্রকার, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করব।
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায়
পর্যটক হিসেবে: বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য সবচেয়ে সাধারণ উপায় হলো পর্যটক হিসাবে। এটি স্বল্পমেয়াদী ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।
উচ্চশিক্ষার জন্য: অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে হলে শিক্ষার্থী ভিসার আবেদন করতে হবে। এই ভিসার মাধ্যমে আপনি অস্ট্রেলিয়ায় থেকে পড়াশোনা করতে পারবেন।
ওয়ার্ক পারমিট হিসাবে: বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় কাজের জন্য যাওয়া যায়। কাজের জন্য অস্ট্রেলিয়া যেতে হলে ওয়ার্ক ভিসা করতে হবে।
যাতায়াত: বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে যাতায়াতের মাধ্যম হলো বিমান।
আরও জানুনঃ সরকারিভাবে কোন কোন দেশে যাওয়া যায়
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে আনুমানিক খরচ
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের খরচ আপনার ভ্রমণের ধরন ও বাজেটের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। ভিসা ফি, বিমান ভাড়া, আবাসন, খাবার, স্থানীয় পরিবহন এবং অন্যান্য খরচ মিলিয়ে, একটি মধ্যম মানের ভ্রমণের জন্য আপনাকে মোটামুটি BDT 200,000 থেকে BDT 500,000 (প্রায় AUD 3,600 থেকে AUD 9,100) খরচ হতে পারে।
পর্যটক হিসাবে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায়
অস্ট্রেলিয়া, তার বিস্তৃত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধুনিক শহরগুলো, এবং বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।
সিডনির অপেরা হাউস থেকে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া অফুরন্ত আকর্ষণ এবং অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে। বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ একটি স্বপ্নপূরণের মতো হতে পারে।
নিম্নে, বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যটক হিসাবে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ধাপ এবং নির্দেশিকা বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ভিসার ধরণ ও আবেদন প্রক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের পর্যটন ভিসা (সাবক্লাস 600) প্রয়োজন। এই ভিসা প্রক্রিয়ায় যা যা প্রয়োজন:
- অনলাইন ভিসা আবেদন: অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট (ImmiAccount) এর মাধ্যমে অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন: পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন, এবং ভ্রমণের বিস্তারিত পরিকল্পনা।
- ভিসা ফি প্রদান: অনলাইনে ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার সময় ফি প্রদান করতে হবে।
- বায়োমেট্রিকস: আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আপনাকে বায়োমেট্রিক তথ্য সরবরাহ করতে হতে পারে।
- ভিসা সাক্ষাৎকার: কোনো ক্ষেত্রে, ভিসা অফিসার আপনার সাথে সাক্ষাৎকারের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করতে পারেন।
উড়োজাহাজ টিকেট এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে যাওয়ার জন্য ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অনেক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট উপলব্ধ। কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স সহ অনেক এয়ারলাইন্স বিভিন্ন কানেক্টিং ফ্লাইট সরবরাহ করে। বিমান টিকিট কেনার আগে, ভালোভাবে তুলনা করে এবং অগ্রিম বুকিং করে সাশ্রয়ী মূল্যে টিকেট কেনার চেষ্টা করুন।
বাসস্থান এবং পরিবহন
অস্ট্রেলিয়ার বড় শহরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের বাসস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন হোটেল, হোস্টেল, এবং এয়ারবিএনবি। ভ্রমণের সময় এবং বাজেট অনুযায়ী উপযুক্ত বাসস্থান নির্বাচন করুন। শহরের মধ্যে পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে পাবলিক বাস, ট্রাম, ট্রেন, এবং উবার ইত্যাদি ব্যবহৃত হতে পারে। বড় শহরগুলোতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বেশ উন্নত এবং সহজে ব্যবহারের উপযোগী।
অস্ট্রেলিয়ায় দর্শনীয় স্থানসমূহ
- সিডনি অপেরা হাউস: বিশ্বখ্যাত এই স্থাপনাটি সিডনির আইকন।
- গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ: বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর এবং স্কুবা ডাইভিং ও স্নর্কেলিংয়ের জন্য অন্যতম সেরা স্থান।
- মেলবোর্নের ফেডারেশন স্কয়ার: মেলবোর্নের প্রাণকেন্দ্র এবং সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল।
- আয়ারস রক (উলুরু): অস্ট্রেলিয়ার আউটব্যাক অঞ্চলে অবস্থিত একটি বিশাল বেলেপাথরের গঠন।
- গ্রেট ওশেন রোড: এই রাস্তা ধরে ড্রাইভ করা এবং সাগরের দৃশ্য উপভোগ করা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি
অস্ট্রেলিয়া একটি নিরাপদ দেশ এবং পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। তবে, ভ্রমণের সময় সাধারণ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। ভ্রমণের পূর্বে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জেনে নিন। ভ্রমণের সময় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম সঙ্গে রাখুন।
আরও আর্টিকেলঃ ইউরোপের কোন দেশে যেতে কত টাকা লাগে
বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায়
অস্ট্রেলিয়া উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়, অত্যাধুনিক গবেষণা সুবিধা, এবং বহুমুখী সাংস্কৃতিক পরিবেশের কারণে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার স্বপ্ন দেখে।
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষার জন্য যাওয়ার প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হতে পারে, তবে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং প্রস্তুতির মাধ্যমে এটি সহজ করা সম্ভব। নিম্নে, আমরা বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করব।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রথম ধাপ হল সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোর্স নির্বাচন করা। অস্ট্রেলিয়ায় বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেমন:
- University of Melbourne
- Australian National University (ANU)
- University of Sydney
- University of Queensland
- Monash University
এগুলো ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ায় আরও অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বিশেষত্ব এবং প্রোগ্রাম রয়েছে। আপনার ক্যারিয়ার লক্ষ্য এবং আগ্রহের ভিত্তিতে সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোর্স নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
ভিসার প্রকার
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রধানত Student Visa (Subclass 500) প্রয়োজন। এই ভিসা পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে:
- অফার লেটার: অস্ট্রেলিয়ার কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পাওয়া।
- Genuine Temporary Entrant (GTE) Requirement: আপনার উদ্দেশ্য সত্যিকার অর্থে শিক্ষাগত হওয়া।
- আর্থিক সক্ষমতা: আপনার পড়াশোনা এবং থাকার খরচ বহন করার জন্য যথেষ্ট অর্থ থাকার প্রমাণ।
- স্বাস্থ্য বীমা: Overseas Student Health Cover (OSHC) বীমা গ্রহণ করা।
আবেদন প্রক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদন প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত ধাপে সম্পন্ন হয়:
- কোর্স এবং বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন: আগ্রহী কোর্স এবং বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা।
- আবেদন করা: নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা। সাধারণত অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করা হয়।
- অফার লেটার প্রাপ্তি: বিশ্ববিদ্যালয় আপনার আবেদন পর্যালোচনা করার পর আপনাকে অফার লেটার পাঠাবে।
- ভিসার জন্য আবেদন: অফার লেটার পাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ান ইমিগ্রেশন অফিসে ভিসার জন্য আবেদন করা।
- ভিসা প্রাপ্তি: সকল প্রয়োজনীয়তা পূরণ হলে আপনাকে ভিসা প্রদান করা হবে।
প্রস্তুতি এবং যাত্রা
ভিসা পাওয়ার পর, অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে:
- টিকিট কেনা: বিমান টিকিট কেনা এবং যাত্রার তারিখ নির্ধারণ করা।
- আবাসনের ব্যবস্থা: প্রথম কয়েক মাসের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা।
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা: অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে বা সেখানে পৌঁছানোর পর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষা: প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করা।
বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাওয়া একটি বড় পদক্ষেপ, তবে সঠিক প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা করলে এটি সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
সঠিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোর্স নির্বাচন করা, ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করা, এবং যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে আপনি আপনার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন।
অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষা আপনাকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ দেবে, যা আপনার ক্যারিয়ারকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
আরও দেখুনঃ মেডিকেল ছাড়া কোন দেশে যাওয়া যায়
ওয়ার্ক পারমিট হিসাবে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায়
অস্ট্রেলিয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উন্নত জীবনমান এবং কর্মক্ষেত্রে সুযোগের কারণে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। বিশেষ করে বাংলাদেশীদের জন্য, উন্নত জীবনের স্বপ্ন ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আকাঙ্ক্ষা তাদেরকে অস্ট্রেলিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে প্রেরণা দেয়।
নিম্নে, আমরা বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন, এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।
ওয়ার্ক পারমিটের প্রকারভেদ
অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন ধরনের ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল:
- Temporary Skill Shortage (TSS) Visa (Subclass 482):
- এই ভিসাটি কর্মীদের অস্ট্রেলিয়ায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করার অনুমতি দেয়।
- এই ভিসার মাধ্যমে আপনার স্পনসর হতে হবে একটি অনুমোদিত নিয়োগকর্তা দ্বারা।
- বিভিন্ন স্কিলড পেশাজীবী এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
- Skilled Independent Visa (Subclass 189):
- এটি একটি স্থায়ী ভিসা যা দক্ষ কর্মীদের অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি দেয়।
- এই ভিসার জন্য কোনো স্পনসর প্রয়োজন হয় না।
- Skilled Nominated Visa (Subclass 190):
- এই ভিসাটিও একটি স্থায়ী ভিসা, তবে এটি অস্ট্রেলিয়ার কোনো একটি নির্দিষ্ট রাজ্য বা অঞ্চলের মনোনয়নের প্রয়োজন হয়।
আবেদন প্রক্রিয়া
ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া একটি কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রতিটি ধাপের জন্য বিস্তারিত তথ্য নীচে দেওয়া হলো:
ধাপ ১: উপযুক্ত ভিসা নির্বাচন
আপনার স্কিলসেট এবং পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে, আপনি কোন ভিসার জন্য আবেদন করবেন তা নির্ধারণ করুন। যদি আপনি একটি নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার দ্বারা স্পনসর হন, তবে TSS ভিসা আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। অন্যথায়, যদি আপনি নিজে স্কিলড কর্মী হিসেবে আবেদন করতে চান, তাহলে Subclass 189 বা Subclass 190 ভিসা বিবেচনা করতে পারেন।
ধাপ ২: দক্ষতা মূল্যায়ন
অস্ট্রেলিয়ান ইমিগ্রেশন অফিসে আপনার দক্ষতা মূল্যায়ন করতে হবে। বিভিন্ন পেশার জন্য নির্দিষ্ট মূল্যায়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে, যেমন ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য Engineers Australia এবং স্বাস্থ্যসেবার জন্য Australian Health Practitioner Regulation Agency (AHPRA)।
ধাপ ৩: ইংরেজি ভাষার দক্ষতা পরীক্ষা
অস্ট্রেলিয়ায় কাজের জন্য ইংরেজি ভাষার উপর ভালো দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। সাধারণত, IELTS, TOEFL বা PTE পরীক্ষার স্কোর গ্রহণ করা হয়।
ধাপ ৪: Expression of Interest (EOI) জমা দিন
Skilled Worker Visas এর জন্য, আপনাকে প্রথমে SkillSelect এর মাধ্যমে একটি Expression of Interest (EOI) জমা দিতে হবে। EOI জমা দেওয়ার পর, আপনি একটি আমন্ত্রণ পেলে পূর্ণাঙ্গ ভিসা আবেদন করতে পারবেন।
ধাপ ৫: ভিসার জন্য আবেদন
আন্তর্জাতিক ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন যেমন দক্ষতা মূল্যায়নের ফলাফল, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা পরীক্ষার স্কোর, কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র ইত্যাদি জমা দিন।
ধাপ ৬: মেডিকেল পরীক্ষা ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করার জন্য একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন। আপনার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং পুলিস ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট জমা দিন।
ধাপ ৭: ভিসা প্রাপ্তি ও প্রস্তুতি
ভিসা প্রাপ্তির পর, আপনি অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারেন। আপনার সমস্ত ডকুমেন্ট এবং প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে প্রস্তুত থাকুন।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্ক পারমিটের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলির তালিকা নিম্নরূপ:
- পাসপোর্টের কপি
- দক্ষতার প্রমাণপত্র (শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা)
- ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণপত্র
- স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- স্পনসরশিপ ডকুমেন্ট (যদি প্রযোজ্য হয়)
- EOI এর স্বীকৃতি পত্র (যদি প্রযোজ্য হয়)
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ার্ক পারমিটে যাওয়ার প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল হলেও, সঠিক তথ্য ও নির্দেশনা অনুসরণ করলে তা সহজেই সম্ভব।
আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক ভিসা নির্বাচন করে, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন ও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে, আপনি অস্ট্রেলিয়ায় একটি সফল কর্মজীবন শুরু করতে পারবেন।
আরও দেখুনঃ IELTS ছাড়া ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যেতে কত টাকা লাগে
অস্ট্রেলিয়া তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উন্নত জীবনমান, এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির জন্য বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বাংলাদেশ থেকেও অনেক মানুষ অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণ করতে চান।
তবে, এই ভ্রমণটি কেমন খরচ হতে পারে তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। নিম্নে, আমরা বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণের খরচের বিস্তারিত বিশ্লেষণ করবো, যাতে আপনি আপনার ভ্রমণের বাজেট সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে পারেন।
ভিসা ফি
অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণের প্রথম ধাপ হলো ভিসা প্রাপ্তি। ভিসা ফি সাধারণত ভিসার ধরন ও আবেদনকারীর বয়সের উপর নির্ভর করে।
- Visitor Visa (Subclass 600): এই ভিসার জন্য ফি প্রায় AUD 145 থেকে AUD 1,065 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৮,০০০ থেকে ৫৯,০০০ টাকা)।
- Student Visa (Subclass 500): এই ভিসার জন্য ফি প্রায় AUD 650 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩৬,০০০ টাকা)।
- Work Visa: ওয়ার্ক ভিসার জন্য ফি ভিসার ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। সাধারণত, AUD 1,265 থেকে AUD 4,045 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৭০,০০০ থেকে ২,২৩,০০০ টাকা)।
বিমান ভাড়া
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় এক বা একাধিক ট্রানজিট লাগতে পারে। বিমান ভাড়া বিভিন্ন এয়ারলাইন ও বুকিং সময়ের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
- ঢাকা থেকে সিডনি বা মেলবোর্নের একটি একমুখী টিকিটের দাম প্রায় BDT 60,000 থেকে BDT 150,000 (প্রায় AUD 1,100 থেকে AUD 2,700)।
- বুকিংয়ের সময় এবং এয়ারলাইনের উপর নির্ভর করে দাম কম বা বেশি হতে পারে।
আবাসনের খরচ
অস্ট্রেলিয়ায় থাকার খরচ শহর এবং থাকার ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
- হোটেল: সাধারণ হোটেল রুমের দৈনিক খরচ প্রায় AUD 100 থেকে AUD 300 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫,৫০০ থেকে ১৬,৫০০ টাকা)।
- হোস্টেল: ব্যাকপ্যাকারদের জন্য হোস্টেলের খরচ প্রায় AUD 20 থেকে AUD 50 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১,১০০ থেকে ২,৭০০ টাকা) প্রতি রাত।
- এয়ারবিএনবি: সম্পূর্ণ অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিতে চাইলে, দৈনিক খরচ প্রায় AUD 70 থেকে AUD 200 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩,৮০০ থেকে ১১,০০০ টাকা) হতে পারে।
খাবার ও পানীয়
খাবারের খরচ আপনার খাদ্যাভাস এবং খাওয়ার জায়গার উপর নির্ভর করে।
- রেস্তোরাঁ: এক জনের জন্য একটি সাধারণ রেস্তোরাঁর খাবারের খরচ প্রায় AUD 15 থেকে AUD 30 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৮০০ থেকে ১,৬০০ টাকা)।
- ফাস্ট ফুড: ফাস্ট ফুডের খরচ প্রায় AUD 10 থেকে AUD 15 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকা)।
- সুপারমার্কেট: সুপারমার্কেট থেকে খাবার কিনতে চাইলে, দৈনিক খরচ প্রায় AUD 20 থেকে AUD 50 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১,১০০ থেকে ২,৭০০ টাকা) হতে পারে।
স্থানীয় পরিবহন
অস্ট্রেলিয়ায় স্থানীয় পরিবহনের খরচ শহর এবং ব্যবহৃত পরিবহনের ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
- বাস/ট্রাম: স্থানীয় বাস বা ট্রামের একবারের টিকিটের দাম প্রায় AUD 3 থেকে AUD 5 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৬৫ থেকে ২৭৫ টাকা)।
- ট্রেন: আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটের দাম প্রায় AUD 10 থেকে AUD 20 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫৫০ থেকে ১,১০০ টাকা)।
- ট্যাক্সি/রাইডশেয়ার: ট্যাক্সি বা উবার ব্যবহার করলে, কিলোমিটার প্রতি খরচ প্রায় AUD 2 থেকে AUD 3 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১১০ থেকে ১৬৫ টাকা) হতে পারে।
ভ্রমণ বীমা
ভ্রমণ বীমা ভ্রমণের সময় জরুরি পরিস্থিতিতে সুরক্ষা প্রদান করে। এর খরচ আপনার ভ্রমণের দৈর্ঘ্য ও কভারেজের উপর নির্ভর করে।
- সাধারণত, ভ্রমণ বীমার খরচ প্রায় AUD 50 থেকে AUD 150 (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২,৭০০ থেকে ৮,৩০০ টাকা) হতে পারে।
অন্যান্য খরচ
অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণের সময় অন্যান্য কিছু খরচও থাকতে পারে যেমন:
- পর্যটন আকর্ষণ: বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণের টিকিটের দাম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, যেমন সিডনি অপেরা হাউস বা গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের ট্যুর।
- শপিং: স্থানীয় মার্কেট বা মলে শপিং করলে আপনার বাজেট অনুযায়ী খরচ হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ মামলা থাকলে ও এখন বিদেশ যেতে পারবেন, নতুন নিয়ম জানুন
উপসংহার
বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার উপায় রয়েছে যা আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে। পর্যটক ভিসা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, কাজের ও স্থায়ী বসবাস ভিসা পর্যন্ত সকল প্রকার ভিসার প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। আশা করি এই নিবন্ধটি আপনাকে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ বা অভিবাসনের জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়ক হবে। শুভ ভ্রমণ!
আর ও পড়ুনঃ
- বাংলাদেশ থেকে ফিনল্যান্ড যাওয়ার উপায়
- বাংলাদেশ থেকে আইসল্যান্ড যাওয়ার উপায়
- বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্ক যাওয়ার উপায়
- বাংলাদেশ থেকে ফিনল্যান্ড যাওয়ার উপায়
- বাংলাদেশ থেকে বেলজিয়াম যাওয়ার উপায়
- বাংলাদেশ থেকে আইসল্যান্ড যাওয়ার উপায়
- বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্ক যাওয়ার উপায়
- বাংলাদেশ থেকে লাটভিয়া যাওয়ার উপায়
- বাংলাদেশ থেকে বেলজিয়াম যাওয়ার উপায়
- বাংলাদেশ থেকে লিথুনিয়া যাওয়ার উপায়
- বাংলাদেশ থেকে সুইডেন যাওয়ার উপায়