বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্ক যাওয়ার উপায়

নর্ডিক দেশ ডেনমার্ক, যার জনসংখ্যা ৫৭ লাখের বেশি এবং এটি ৪৪৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। নিম্নভূমির এ দেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। বিশ্বের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ডেনমার্ক অন্যতম। 

শিক্ষাক্ষেত্রে, অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর মতো, ডেনমার্কও বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে। দেশের উচ্চ মানের জীবনযাত্রার কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী, পর্যটক এবং শ্রমিক হিসাবে ডেনমার্ক যান। 

ডেনমার্কে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে কিছু উপায় আছে যেমন উচ্চশিক্ষার জন্য, টুরিস্ট হিসাবে এবং শ্রমিক হিসাবে। বাংলাদেশ থেকে আপনি যদি ডেনমার্ক যেতে চান তাহলে আপনাকে আগে নির্ধারণ করতে হবে আপনি কি হিসাবে ডেনমার্কে যেতে চান।

আমাদের আজকের আর্টিকেলে আলোচনার বিষয় হলো বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্ক যাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। নিম্নে বাংলাদেশ থেকেডেনমার্ক যাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

bangladesh theke denmark jawar upay

বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্ক যাওয়ার উপায়

বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্ক কিভাবে যাওয়া সম্ভব! ইউরোপের জনপ্রিয় দেশ অনেকের স্বপ্নের গন্তব্য। কিন্তু কিভাবে ডেনমার্ক যাওয়ার যায় সেই বিষয়ে অনেকের সঠিক ধারণা নেই। ডেনমার্ক যাওয়ার বেশ কিছু উপায় আছে যেমন

১. উচ্চ শিক্ষার জন্য : বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য ডেনমার্কে যেতে পারে।

২. টুরিস্ট/ ভিজিটর হিসেবে: একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাংলাদেশে নাগরিক টুরিস্ট এবং ভিজিটর হিসাবে ডেনমার্কে যেতে পারবে।

৩. ওয়ার্ক পারমিট: কাজের জন্য বাংলাদেশের নাগরিক ডেনমার্কে যেতে পারবে।

যাতায়াত: ডেনমার্ক যাওয়ার জন্য পরিবহন হিসাবে একমাত্র মাধ্যম হলো বিমান।

ডেনমার্ক যাওয়ার উপায় এবং প্রক্রিয়ার ধরণ নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো।

বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য ডেনমার্ক যাওয়া

বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্কে যাওয়ার জন্য উচ্চশিক্ষার খরচ, সুযোগ-সুবিধা এবং আইইএলটিএসের স্কোর সম্পর্কিত বিস্তারিত  তথ্য নিচে দেয়া হলো:

উচ্চশিক্ষা

ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষা অত্যন্ত মানসম্পন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং গবেষণা সুযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামও রয়েছে, যা ইংরেজিতে পড়ানো হয়।

খরচ

ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার খরচ বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হতে পারে। সাধারণত টিউশন ফি ৬,০০০ ইউরো থেকে ১৬,০০০ ইউরো (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬,০০,০০০ টাকা থেকে ১৬,০০,০০০ টাকা) পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া, মাসিক বাসস্থান, খাবার, পরিবহন এবং অন্যান্য খরচ যোগ করলে মোট খরচ মাসে প্রায় ৮০০ থেকে ১২০০ ইউরো (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকা) হতে পারে।

সুযোগ-সুবিধা

ডেনমার্কে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে:

  • আবাসন: বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এবং শহরে বিভিন্ন ধরনের আবাসন ব্যবস্থা পাওয়া যায়।
  • স্বাস্থ্যসেবা: ডেনমার্কের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাও অত্যন্ত উন্নত।
  • পরিবহন: শিক্ষার্থীরা ছাত্রদের জন্য ডিসকাউন্টসহ সহজলভ্য এবং সুবিধাজনক পরিবহন ব্যবস্থা উপভোগ করতে পারেন।
  • শিক্ষা উপকরণ: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অত্যাধুনিক পাঠাগার, ল্যাব এবং অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ রয়েছে।

আইইএলটিএস স্কোর

ডেনমার্কে ইংরেজি ভাষায় পড়াশোনা করতে হলে সাধারণত আইইএলটিএস পরীক্ষায় ভালো স্কোর প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম আইইএলটিএস স্কোর ৬.০ থেকে ৭.০ পর্যন্ত হতে পারে। তবে, সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম বা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী এই স্কোর ভিন্ন হতে পারে।

উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে, আপনি ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট বা তাদের এডমিশন অফিসে যোগাযোগ করুন।

উচ্চশিক্ষার জন্য ডেনমার্ক যাওয়ার জন্য  ভিসার ধরণ

ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার জন্য বেশ কিছু ভিসার ধরণ রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে প্রদান করা হয়। সাধারণত উচ্চশিক্ষার জন্য নিম্নলিখিত ভিসার ধরণগুলি প্রযোজ্য:

১. স্টুডেন্ট ভিসা (Student Visa)

এই ভিসা সাধারণত ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে প্রচলিত এবং শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদী থাকার সুযোগ প্রদান করে।

আবেদন প্রক্রিয়া:

  1. একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি: প্রথমে আপনাকে ডেনমার্কের একটি স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে।
  2. ভর্তির প্রমাণ: ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর, প্রতিষ্ঠান থেকে একটি অফিসিয়াল অ্যাডমিশন লেটার বা অফার লেটার পাবেন।
  3. আবেদন ফর্ম পূরণ: ড্যানিশ ইমিগ্রেশন সার্ভিসের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করুন এবং পূরণ করুন।
  4. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস: আবেদন ফর্মের সাথে নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে:
  • ভর্তির প্রমাণ (অফার লেটার)
  • পাসপোর্টের কপি
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণ)

স্বাস্থ্য বীমা প্রমাণপত্র

  1. ভিসা ফি প্রদান: নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে।
  2. আবেদন জমা: আবেদন ফর্ম এবং ডকুমেন্টস ডেনমার্কের দূতাবাস বা কনস্যুলেটে জমা দিতে হবে।

২. রেসিডেন্স পারমিট ফর স্টাডি (Residence Permit for Study)

ডেনমার্কে ৯০ দিনের বেশি সময় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হলে আপনাকে রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া:

  1. অ্যাডমিশন লেটার: একটি স্বীকৃত ডেনিশ বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাডমিশন লেটার প্রাপ্তি।
  2. আবেদন ফর্ম পূরণ: SIRI (Danish Agency for International Recruitment and Integration) এর ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
  3. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
  • পাসপোর্টের কপি
  • অ্যাডমিশন লেটার
  • স্বাস্থ্য বীমা
  • অর্থনৈতিক সঙ্গতির প্রমাণ
  1. ভিসা ফি: আবেদন ফি প্রদান করতে হবে।
  2. আবেদন জমা: আবেদন ফর্ম এবং ডকুমেন্টস দূতাবাস বা ভিসা সেন্টারে জমা দিন।

৩. ফাস্ট-ট্র্যাক ভিসা (Fast-track Visa)

যারা ডেনমার্কে অল্প সময়ের জন্য বিশেষ কোনো কোর্সে অংশগ্রহণ করতে চান তাদের জন্য এই ভিসাটি প্রযোজ্য। এটি সাধারণত দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ সময়ের জন্য পরিচিত।

অতিরিক্ত তথ্য

  • বিষয়ভিত্তিক স্কিম: কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ স্কিম বা প্রোগ্রাম অনুযায়ী ভিসা প্রদান করা হয়, যেমন Erasmus Mundus।
  • ভিসার মেয়াদ: আপনার কোর্সের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে ভিসার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়।

ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার জন্য ভিসা সম্পর্কিত আরও বিস্তারিত তথ্য এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে ড্যানিশ ইমিগ্রেশন সার্ভিস বা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করতে পারেন।

বাংলাদেশ থেকে টুরিস্ট হিসাবে ডেনমার্ক ভ্রমণ 

ডেনমার্ক যাওয়ার অন্যতম উপায় হলো টুরিস্ট হিসাবে যাওয়া। প্রতিবছর ববাংলাদেশ থেকে অনেক ট্রেভেল প্রেমীরা ডেনমার্ক ভ্রমন করতে যায়। ট্রভেলার হিসেবে ডেনমার্ক যেতে হলে আপনাকে শেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে, কারণ ডেনমার্ক শেনজেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। নিচে ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হলো:

ভিসার ধরন

ডেনমার্ক ভ্রমণের জন্য আপনাকে শেঙ্গেন টুরিস্ট ভিসা (শর্ট স্টে ভিসা) এর জন্য আবেদন করতে হবে।

ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া

  1. ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ:
  • অনলাইনে ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
  • ফর্মটি ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে।
  1. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
  • পাসপোর্ট: কমপক্ষে ৩ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে এবং পূর্ববর্তী ভিসাগুলো থাকতে হবে।
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি: সাম্প্রতিক ছবি।
  • ফ্লাইট রিজার্ভেশন: ডেনমার্কে যাওয়া এবং ফেরার টিকিট।
  • ভ্রমণ পরিকল্পনা: কোথায় কোথায় ভ্রমণ করবেন তার বিস্তারিত বিবরণ।
  • আবাসনের প্রমাণ: হোটেল বুকিং বা যেখানে থাকবেন তার প্রমাণ।
  • ভ্রমণ বীমা: কমপক্ষে ৩০,০০০ ইউরোর কভারেজ সহ ভ্রমণ বীমা।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট: শেষ ৩-৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট যা আপনার আর্থিক স্থিতি দেখায়।
  • চাকরির প্রমাণ: যদি চাকরিজীবী হন তাহলে নিয়োগপত্র এবং ছুটির অনুমতি।
  • বিজনেস প্রমাণ: যদি ব্যবসায়ী হন তাহলে ব্যবসার প্রমাণ এবং ব্যবসার নথি।
  • ভিসা ফি: ভিসা আবেদন ফি অবশ্যই  জমা দেওয়া লাগবে।
  1. ভিসা আবেদন জমা:
  • ডেনমার্কের দূতাবাস বা ভিসা আবেদন কেন্দ্রের মাধ্যমে আবেদন জমা দিতে হবে।
  • অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হতে পারে।
  1. ইন্টারভিউ:
  • দূতাবাস বা ভিসা কেন্দ্র আপনাকে ইন্টারভিউর জন্য ডাকতে পারে।

ভিসা প্রসেসিং সময়

সাধারণত, ভিসা প্রসেসিং করতে ১৫ থেকে ৩০ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি বেশি সময় নিতে পারে।

অতিরিক্ত তথ্য

  • শেঙ্গেন ভিসা: একবার শেঙ্গেন ভিসা পেলে আপনি শেঙ্গেন অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও ভ্রমণ করতে পারবেন।
  • ভিসা মেয়াদ: সাধারণত ৯০ দিনের জন্য দেয়া হয়, তবে এটি আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনার উপর নির্ভর করে।

ডেনমার্ক ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রেখেছেন। আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য ডেনমার্কের দূতাবাস বা কনস্যুলেটের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট পরিদর্শন করতে পারেন।

টুরিস্ট হিসাবে ডেনমার্ক ভ্রমণে আনুমানিক খরচ 

বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্কে টুরিস্ট হিসাবে ভ্রমণের জন্য আনুমানিক খরচ বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। এখানে বিভিন্ন খরচের আনুমানিক ধারণা দেওয়া হলো:

১. ভিসা ফি

শেঙ্গেন ভিসার জন্য সাধারণত ৮০ ইউরো (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯,০০০ টাকা) ফি দিতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার অন্যান্য খরচও থাকতে পারে।

২. বিমান ভাড়া

ঢাকা থেকে কোপেনহেগেন পর্যন্ত বিমান ভাড়া সাধারণত ৭০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা সিজন এবং এয়ারলাইনসের উপর নির্ভর করে।

৩. আবাসন

ডেনমার্কে হোটেল বা অন্যান্য আবাসনের খরচ বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হতে পারে। এখানে কিছু আনুমানিক খরচ দেওয়া হলো:

  • বাজেট হোটেল/হোস্টেল: প্রতি রাতে ৫০-১০০ ইউরো (প্রায় ৫,০০০-১০,০০০ টাকা)
  • মিড-রেঞ্জ হোটেল: প্রতি রাতে ১০০-১৫০ ইউরো (প্রায় ১০,০০০-১৫,০০০ টাকা)
  • লাক্সারি হোটেল: প্রতি রাতে ১৫০ ইউরো (প্রায় ১৫,০০০ টাকা) এর উপরে

৪. খাবার

ডেনমার্কে খাবারের খরচও বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হতে পারে। আনুমানিক খরচ:

  • রেস্তোরাঁয় এক বেলার খাবার: ২০-৪০ ইউরো (প্রায় ২,০০০-৪,০০০ টাকা)
  • মাঝারি মানের রেস্তোরাঁ: ৪০-৭০ ইউরো (প্রায় ৪,০০০-৭,০০০ টাকা)

৫. পরিবহন

ডেনমার্কের পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। আনুমানিক খরচ:

  • স্থানীয় ট্রান্সপোর্ট (বাস/মেট্রো): ২.৫-৪ ইউরো (প্রায় ২৫০-৪০০ টাকা) প্রতি টিকিট
  • ট্যাক্সি: প্রতি কিলোমিটারে ২ ইউরো (প্রায় ২০০ টাকা)

৬. ভ্রমণ বীমা

ভ্রমণ বীমার জন্য সাধারণত ৫০-১০০ ইউরো (প্রায় ৫,০০০-১০,০০০ টাকা) খরচ হতে পারে।

৭. অন্যান্য খরচ

স্মারক, ট্যুরিস্ট আকর্ষণ প্রবেশ ফি এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচগুলো ধরেও ২০০-৫০০ ইউরো (প্রায় ২০,০০০-৫০,০০০ টাকা) যোগ করতে পারেন।

মোট আনুমানিক খরচ

এক সপ্তাহের জন্য ডেনমার্কে ভ্রমণের মোট আনুমানিক খরচ:

  • বাজেট: ২,০০০-৩,০০০ ইউরো (প্রায় ২,০০,০০০-৩,০০,০০০ টাকা)
  • মিড-রেঞ্জ: ৩,০০০-৪,৫০০ ইউরো (প্রায় ৩,০০,০০০-৪,৫০,০০০ টাকা)
  • লাক্সারি: ৪,৫০০ ইউরো (প্রায় ৪,৫০,০০০ টাকা) এর উপরে

এই খরচগুলো আনুমানিক, যা ভ্রমণের ধরন এবং ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিট হিসাবে ডেনমার্ক যাওয়া উপায়

বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্কে ওয়ার্ক পারমিটের মাধ্যমে যাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ কিছু ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এখানে ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. চাকরি খোঁজা

ডেনমার্কে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার প্রথম ধাপ হলো একটি চাকরি খুঁজে বের করা। আপনি বিভিন্ন জব পোর্টাল এবং লিংকডইন এর মাধ্যমে ডেনমার্কে চাকরি খুঁজতে পারেন। কিছু জনপ্রিয় জব পোর্টাল হলো:

  • Jobindex.dk
  • Workindenmark.dk
  • Thelocal.dk/jobs
  • StepStone.dk
  • LinkedIn

২. চাকরির অফার পেতে হবে

একটি চাকরি খুঁজে পাওয়ার পর আপনাকে ডেনমার্কের একজন নিয়োগকর্তার কাছ থেকে অফিসিয়াল চাকরির অফার পেতে হবে।

৩. ওয়ার্ক পারমিট এবং রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করা

চাকরির অফার পাওয়ার পর আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট এবং রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। ডেনমার্কে কাজ করার জন্য আপনাকে উভয় পারমিটের প্রয়োজন হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া:

  1. আবেদন ফর্ম পূরণ: ড্যানিশ ইমিগ্রেশন সার্ভিসের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করুন এবং পূরণ করুন।
  2. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস: আবেদন ফর্মের সাথে নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে:
  • পাসপোর্টের কপি
  • চাকরির অফার লেটার
  • চাকরির বিবরণ (কাজের ধরন, বেতন ইত্যাদি)
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  1. ভিসা ফি প্রদান: নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে।
  2. আবেদন জমা: আবেদন ফর্ম এবং ডকুমেন্টস ডেনমার্কের দূতাবাস বা কনস্যুলেটে জমা দিতে হবে।

৪. প্রক্রিয়াকরণের সময়

ডেনমার্কের ওয়ার্ক ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় সাধারণত ৩০ দিন। তবে, ফাস্ট-ট্র্যাক স্কিমের আওতায় কিছু ক্ষেত্রে এটি মাত্র ১০ দিনও হতে পারে।

৫. ভিসা প্রাপ্তি এবং যাত্রা

ওয়ার্ক পারমিট এবং রেসিডেন্স পারমিট পাওয়ার পর আপনি ডেনমার্কে যাত্রা করতে পারেন। সেখানে পৌঁছানোর পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার পারমিট সংগ্রহ করতে হবে।

অতিরিক্ত তথ্য

ডেনমার্কের ওয়ার্ক পারমিট প্রাপ্তির জন্য কিছু নির্দিষ্ট স্কিম রয়েছে, যেমন:

  • Positive List Scheme: ডেনমার্কে উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন পেশার ক্ষেত্রে।
  • Pay Limit Scheme: একটি নির্দিষ্ট বেতন স্কেলের উপরে যারা কাজ করছেন তাদের জন্য।

ডেনমার্কে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আরও বিস্তারিত তথ্য ও নির্দিষ্ট নির্দেশনার জন্য ড্যানিশ ইমিগ্রেশন সার্ভিসের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করুন।

ওয়ার্ক পারমিট হিসাবে ডেনমার্ক যাওয়ার জন্য আনুমানিক খরচ

ডেনমার্কে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে গেলে খরচ কেমন হবে তা বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে, যেমন আপনার জীবনযাত্রার মান, বাসস্থানের ধরন, এবং ব্যক্তিগত খরচ। এখানে কিছু প্রধান খরচের ধরন এবং তাদের আনুমানিক ব্যয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো:

১. ভিসা এবং পারমিট ফি

  • ওয়ার্ক পারমিট ফি: প্রায় ৩২০ ইউরো (প্রায় ৩৫,০০০ টাকা)।
  • ভিসা ফি: প্রায় ৮০ ইউরো (প্রায় ৯,০০০ টাকা)।

২. বিমান ভাড়া

  • ঢাকা থেকে কোপেনহেগেন পর্যন্ত বিমান ভাড়া সাধারণত ৭০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা সিজন এবং এয়ারলাইনসের উপর নির্ভর করে।

৩. বাসস্থান

ডেনমার্কে বাসস্থানের খরচ শহর অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। কোপেনহেগেনের মত বড় শহরে খরচ বেশি হতে পারে। আনুমানিক খরচ:

  • একক কক্ষের অ্যাপার্টমেন্ট: প্রতি মাসে ৮০০-১৫০০ ইউরো (প্রায় ৮০,০০০-১,৫০,০০০ টাকা)।
  • শেয়ার করা অ্যাপার্টমেন্ট: প্রতি মাসে ৪০০-৭০০ ইউরো (প্রায় ৪০,০০০-৭০,০০০ টাকা)।

৪. খাবার

ডেনমার্কে খাবারের খরচও বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হতে পারে। আনুমানিক খরচ:

  • মাসিক খাবারের খরচ: ২০০-৩৫০ ইউরো (প্রায় ২০,০০০-৩৫,০০০ টাকা)।
  • রেস্তোরাঁয় এক বেলার খাবার: ২০-৪০ ইউরো (প্রায় ২,০০০-৪,০০০ টাকা)।

৫. পরিবহন

ডেনমার্কের পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। আনুমানিক খরচ:

  • মাসিক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পাস: ৫০-৮০ ইউরো (প্রায় ৫,০০০-৮,০০০ টাকা)।
  • একক ট্রান্সপোর্ট টিকিট: ২.৫-৪ ইউরো (প্রায় ২৫০-৪০০ টাকা)।

৬. স্বাস্থ্যসেবা

ডেনমার্কে স্বাস্থ্যসেবা অত্যন্ত উন্নত এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনামূল্যে। তবে, আপনি বীমার জন্য কিছু খরচ করতে পারেন:

  • স্বাস্থ্য বীমা: ৩০-৫০ ইউরো (প্রায় ৩,০০০-৫,০০০ টাকা) প্রতি মাসে।

৭. অন্যান্য খরচ

  • ইন্টারনেট এবং ইউটিলিটি বিল: ৫০-১০০ ইউরো (প্রায় ৫,০০০-১০,০০০ টাকা) প্রতি মাসে।
  • জীবনযাত্রার অন্যান্য খরচ: ২০০-৩০০ ইউরো (প্রায় ২০,০০০-৩০,০০০ টাকা) প্রতি মাসে।

মোট আনুমানিক মাসিক খরচ

একজন একক ব্যক্তির জন্য ডেনমার্কে মোট আনুমানিক মাসিক খরচ:

  • বাজেট জীবনযাত্রা: ১,৫০০-২,০০০ ইউরো (প্রায় ১,৫০,০০০-২,০০,০০০ টাকা)।
  • মাঝারি মানের জীবনযাত্রা: ২,০০০-২,৫০০ ইউরো (প্রায় ২,০০,০০০-২,৫০,০০০ টাকা)।
  • উচ্চ মানের জীবনযাত্রা: ২,৫০০ ইউরো (প্রায় ২,৫০,০০০ টাকা) বা এর বেশি।

এই খরচগুলো আনুমানিক এবং আপনার ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার ধরণ ও পছন্দের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্ক যাওয়ার উপায় সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ ভিসা ছাড়া কতদিন ডেনমার্কে থাকা যায়?

উত্তরঃ আপনি ভিসা ছাড়াই পর্যটন উদ্দেশ্যে ডেনমার্কে ৯০ দিনের জন্য থাকতে পারেন যদি আপনি একটি শেঙ্গেন অঞ্চলভুক্ত দেশের নাগরিক হন। তবে বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে শেঙ্গেন ভিসা প্রয়োজন। বিস্তারিত তথ্যের জন্য ড্যানিশ ইমিগ্রেশন সার্ভিসের ওয়েবসাইট দেখুন।

প্রশ্নঃ ডেনমার্কে ওয়ার্ক পারমিট পেতে কতদিন লাগে?

উত্তরঃ ডেনমার্কের কাজের ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় সাধারণত ৩০ দিন। তবে ফাস্ট-ট্র্যাক স্কিমের আওতায়, কিছু ভিসার জন্য প্রক্রিয়াকরণ সময় মাত্র ১০ দিনও হতে পারে।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্কে কিভাবে চাকরি পাওয়া যায়?

উত্তরঃ ডেনমার্কে কাজ করতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি নাগরিকদের অবশ্যই ওয়ার্ক ভিসা এবং রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। একটি ডেনিশ কাজের ভিসার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে, আপনাকে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

  1. চাকরি খুঁজুন: প্রথমে ডেনমার্কে একটি চাকরি খুঁজুন। আপনি বিভিন্ন জব পোর্টাল, ডেনিশ কোম্পানির ওয়েবসাইট, অথবা লিংকডইন-এর মাধ্যমে চাকরি খুঁজতে পারেন।
  2. চাকরির অফার: ডেনমার্কের একজন নিয়োগকর্তার কাছ থেকে একটি অফিসিয়াল চাকরির চিঠি পেতে হবে।
  3. ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন: চাকরির অফার পাওয়ার পর, আপনাকে ডেনমার্কের ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
  • আবেদন ফর্ম পূরণ করুন: ড্যানিশ ইমিগ্রেশন সার্ভিসের ওয়েবসাইটে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস: পাসপোর্ট, চাকরির অফার লেটার, যোগ্যতার প্রমাণপত্র, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে।
  • ভিসা ফি প্রদান: ভিসা আবেদন ফি জমা দিতে হবে।
  1. প্রক্রিয়াকরণের সময়: সাধারণত প্রক্রিয়াকরণের সময় ৩০ দিন। ফাস্ট-ট্র্যাক স্কিমের আওতায় প্রক্রিয়াকরণ সময় কম হতে পারে।

ডেনমার্কে কাজ করার ইচ্ছা থাকলে আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য ড্যানিশ ইমিগ্রেশন সার্ভিসের ওয়েবসাইট দেখুন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন।

উপসংহার 

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ইউরোপ যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে সঠিক নিয়ম জানা থাকে না বলে ইউরোপ যাওয়ার সম্ভব হয়ে উঠে না। স্বপ্নের গন্তব্য ইউরোপ যেতে হলে বেশ কিছু ধারণা থাকতে হবে।

উপরিউক্ত আর্টিকেলে বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্ক যাওয়ার উপায় সম্পর্কে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যারা ইউরোপ যেতে ইচ্ছুক, আশাকরি আমার আর্টিকেল থেকে অনেক উপকৃত হবেন। সবাই কে ধন্যবাদ। 

আর ও পড়ুনঃ

DISCLAIMER

এই ব্লগ পোস্ট আর্টিকেল এবং আমাদের স্যোসাল মিডিয়া একাউন্ট এর তথ্য সম্পূর্ন নিরাপদ, যাচাই করা, বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে রিসার্স করে সবার উপকারের জন্য নেওয়া হয়েছে। আমরা বন্ধ পরিকর আপনাদের কে নির্ভুল নিতে, তারপর ও যদি আপনাদের কোন অভিযোগ ও কোন বেপার জানার থাকে আমাদের কে মেইল করুন [email protected] ধন্যবাদ।

WhatsApp চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
Telegram চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
 Facebook Page এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us 
Quora তে আমাদের কে ফলো করুন- Follow Us
Pinterest এ আমাদের কে ফলো করুন- Follow Us
Twitter এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
Web Stories এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন Follow Us

 

Author

  • Ruthy Musa

    আমি রুথি মুসা, Wikiofpro.com-এর একজন লেখক। আমি পাঠকদের তথ্য প্রদান এবং অনুপ্রাণিত করার জন্য সাধারণ বিষয়গুলি গভীরভাবে শেয়ার করি। আমার লক্ষ্য হল সঠিক তথ্য এবং ব্যাপক জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা, যাতে তারা আরও সাবলীল এবং সফলভাবে নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে পারে।

    View all posts

Leave a Comment