বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে ২০২৪

থাইল্যান্ড, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রত্ন, তার অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। উজ্জ্বল মন্দির, সোনালি বালুকাবেলা, স্বচ্ছ নীল জল এবং সবুজে মোড়া পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত এই দেশটি ভ্রমণকারীদের জন্য একটি চিরস্থায়ী আকর্ষণ।

স্থানীয় বাজারের রঙিন কোলাহল, প্রাচীন ঐতিহ্যের মেলবন্ধন এবং আধুনিকতার ছোঁয়া থাইল্যান্ডকে একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা প্রদান করে। থাই জনজীবনের উষ্ণ আতিথেয়তা এবং বিভিন্ন স্বাদের অসাধারণ রান্না থাইল্যান্ডের সৌন্দর্যকে আরও বেশী হৃদয়গ্রাহী করে তোলে।

এই অপরুপ সৌন্দর্যের দেশে বাংলাদেশের পর্যটকদের ভ্রমণ প্রতিনিয়ত সম্প্রসারণ হচ্ছে। যারা নতুন থাইল্যান্ড ভ্রমণ করতে চাইছেন তাদের অনেকের জানা নেই থাইল্যান্ড যতে আনুমানিক কতো খরচ হতে পারে। আমাদের আজকের

আলোচনার বিষয় হলো বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা।

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে

থাইল্যান্ড পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল। সুন্দর সৈকত, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং খাদ্য সবই এখানে আছে যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? তাহলে এই সম্পূর্ণ গাইডটি আপনার জন্য।

১. বিমান ভাড়া

থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য প্রথম খরচ হল বিমান ভাড়া। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককের সুয়ার্নভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অন্যতম প্রধান গন্তব্য।

  • এয়ারলাইন্স এবং ভাড়া: বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স রয়েছে যা বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে ফ্লাইট পরিচালনা করে। যেমন, বাংলাদেশ বিমান, থাই এয়ারওয়েজ, এয়ার এশিয়া, মালিন্দো এয়ার প্রভৃতি। সাধারণত, একটি রিটার্ন টিকিটের খরচ ২৫,০০০ টাকা থেকে ৪৫,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে, সিজন এবং বুকিং সময়ের উপর নির্ভর করে।

২. ভিসা ফি

বাংলাদেশি নাগরিকদের থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য ভিসার প্রয়োজন। ভিসা প্রসেসিং ফি ভিসার ধরন ও মেয়াদের উপর নির্ভর করে।

  • ট্যুরিস্ট ভিসা ফি: সাধারণত ট্যুরিস্ট ভিসার ফি ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকার মধ্যে হয়।

৩. হোটেল ও আবাসনের খরচ

থাইল্যান্ডে বিভিন্ন ধরনের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে – বাজেট হোস্টেল থেকে শুরু করে পাঁচতারা হোটেল পর্যন্ত।

  • বাজেট হোটেল: প্রতিদিনের জন্য ১,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা।
  • মিড-রেঞ্জ হোটেল: প্রতিদিনের জন্য ৩,৫০০ থেকে ৭,০০০ টাকা।
  • লাক্সারি হোটেল: প্রতিদিনের জন্য ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা বা তার বেশি।

৪. খাদ্য ও পানীয়

থাইল্যান্ডে খাবারের খরচ নির্ভর করে আপনি কোথায় খাচ্ছেন তার উপর।

  • স্ট্রিট ফুড: প্রতি মিলে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা।
  • লোকাল রেস্টুরেন্ট: প্রতি মিলে ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা।
  • ইন্টারন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট: প্রতি মিলে ১,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা।

৫. পরিবহন

থাইল্যান্ডে স্থানীয় যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে।

  • ট্যাক্সি: প্রতি কিলোমিটারে ২৫ থেকে ৫০ টাকা।
  • টুকটুক: প্রতি রাইড ১০০ থেকে ৩০০ টাকা।
  • বাস ও ট্রেন: প্রতিদিনের জন্য ২০০ থেকে ৫০০ টাকা।

৬. পর্যটন স্থানের প্রবেশ ফি

থাইল্যান্ডে অনেক জনপ্রিয় পর্যটন স্থান রয়েছে, যা দেখতে অবশ্যই প্রবেশ ফি দিতে হয়।

  • বুদ্ধ মূর্তি এবং মন্দির: ২০০ থেকে ৫০০ টাকা।
  • জাতীয় উদ্যান: ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা।
  • সামুদ্রিক অ্যাক্টিভিটি: স্কুবা ডাইভিং, স্নরকেলিং প্রভৃতি খরচ ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা।

৭. শপিং

থাইল্যান্ড শপিং এর জন্যও বিখ্যাত।

  • স্মারক ও উপহার সামগ্রী: ১,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা।
  • ব্র্যান্ডেড পোশাক ও অন্যান্য আইটেম: ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা বা তার বেশি।

৮. অন্যান্য খরচ

  • ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স: ২,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা।
  • সিম কার্ড ও ইন্টারনেট প্যাকেজ: ১,০০০ থেকে ২,০০০ টাকা।

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে সেই বিষয়ে নিয়ে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর/FAQ

প্রশ্ন: থাইল্যান্ড ভিসা কত টাকা লাগে?

উত্তর: বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ডে ভ্রমণের জন্য ভিসার ফি নির্ভর করে ভিসার ধরন এবং মেয়াদের উপর। সাধারণত, বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য থাইল্যান্ডের ট্যুরিস্ট ভিসার ফি নিম্নরূপ হতে পারে:

  1. সিঙ্গেল এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসা: প্রায় ৩,০০০ টাকা
  2. মাল্টিপল এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসা: প্রায় ১৫,০০০ টাকা

তবে, ফি পরিবর্তনশীল এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন হতে পারে। ভিসার আবেদন করার আগে থাইল্যান্ড দূতাবাস বা কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করে সর্বশেষ তথ্য জানা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার অন্যান্য খরচ যেমন, ভিসা সার্ভিস ফি, স্বাস্থ্য বীমা ফি ইত্যাদিও প্রযোজ্য হতে পারে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে কত সময় লাগে?

উত্তর: বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে সময়ের পরিমাণ নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের পরিবহন ব্যবহার করছেন তার উপর। এখানে কিছু সাধারণ সময়সূচি দেয়া হলো:

বিমানে:

  • ঢাকা থেকে ব্যাংকক সরাসরি ফ্লাইটে সাধারণত ২.৫ থেকে ৩ ঘণ্টা লাগে।
  • অন্যান্য গন্তব্য যেমন চিয়াং মাই বা ফুকেট-এ যেতে ঢাকায় একটি কানেক্টিং ফ্লাইটের প্রয়োজন হতে পারে, যা মোট সময়কে বৃদ্ধি করতে পারে।

প্রশ্ন: থাইল্যান্ডে ১ বছরের ভিসার খরচ কত?

উত্তর: থাইল্যান্ডে ১ বছরের ভিসার খরচ নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করছেন তার উপর। এখানে কিছু সাধারণ ভিসার ধরন এবং তাদের খরচ উল্লেখ করা হলো:

১. Tourist Visa (Multiple Entry):

  • খরচ: প্রায় $200 USD (১৮,০০০ BDT এর মতো)
  • মেয়াদ: ৬ মাস থেকে ১ বছর (প্রতি প্রবেশে ৬০ দিন)

২. Non-Immigrant Visa:

A. Non-Immigrant B Visa (Business or Work):

  • খরচ: প্রায় $80-200 USD (৭,০০০ থেকে ১৮,০০০ BDT এর মতো)
  • মেয়াদ: ১ বছর

B. Non-Immigrant ED Visa (Education):

  • খরচ: প্রায় $80-200 USD (৭,০০০ থেকে ১৮,০০০ BDT এর মতো)
  • মেয়াদ: ১ বছর

C. Non-Immigrant O Visa (Retirement, Marriage, etc.):

  • খরচ: প্রায় $80-200 USD (৭,০০০ থেকে ১৮,০০০ BDT এর মতো)
  • মেয়াদ: ১ বছর

৩. Elite Visa:

  • খরচ: প্রায় $15,000-60,000 USD (১৩,৫০,০০০ থেকে ৫৪,০০,০০০ BDT এর মতো)
  • মেয়াদ: ৫ বছর থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন প্যাকেজে

৪. Smart Visa (for Investors, Executives, Startups, etc.):

  • খরচ: $100-300 USD (৯,০০০ থেকে ২৭,০০০ BDT এর মতো)
  • মেয়াদ: ১ থেকে ৪ বছর

এই তথ্যগুলি পরিবর্তনশীল হতে পারে এবং নির্ভর করে আপনার নির্দিষ্ট অবস্থান এবং আবেদন পদ্ধতির উপর। সঠিক এবং আপডেট তথ্যের জন্য থাইল্যান্ডের দূতাবাস বা কনস্যুলেটে যোগাযোগ করা সবচেয়ে ভালো।

উপসংহার

বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড ভ্রমণের মোট খরচ অনেকটাই আপনার পরিকল্পনার উপর নির্ভর করবে। যদি আপনি একটি বাজেট ভ্রমণ করতে চান, তাহলে আপনার খরচ কম হবে। আবার যদি আপনি একটি লাক্সারি ভ্রমণ করতে চান, তাহলে খরচ কিছুটা বেশি হবে।

এখানে আমরা আপনাকে একটি অনুমানমূলক খরচের বিবরণ দিয়েছি। সবশেষে, ভ্রমণের খরচ নির্ভর করে আপনার বাজেট ও ভ্রমণ পরিকল্পনার উপর। সব ধরনের খরচ বিবেচনা করে, আপনার ভ্রমণটি যেন সুখকর ও স্মরণীয় হয় সেই দিকটাও নিশ্চিত করতে হবে।

উপরিউক্ত আলোচনার বিষয় ছিল বাংলাদেশ থেকে থাইল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা। যারা থাইল্যান্ড ভ্রমণ পরিকল্পনা করবেন তারা এই আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ

আর ও পড়ুনঃ

 

DISCLAIMER

এই ব্লগ পোস্ট আর্টিকেল এবং আমাদের স্যোসাল মিডিয়া একাউন্ট এর তথ্য সম্পূর্ন নিরাপদ, যাচাই করা, বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে রিসার্স করে সবার উপকারের জন্য নেওয়া হয়েছে। আমরা বন্ধ পরিকর আপনাদের কে নির্ভুল নিতে, তারপর ও যদি আপনাদের কোন অভিযোগ ও কোন বেপার জানার থাকে আমাদের কে মেইল করুন [email protected] ধন্যবাদ।

WhatsApp চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
Telegram চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
 Facebook Page এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us 
Quora তে আমাদের কে ফলো করুন- Follow Us
Pinterest এ আমাদের কে ফলো করুন- Follow Us
Twitter এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
Web Stories এ আমাদের কে ফলো করুন Follow Us
TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন Follow Us

 

Author

  • Ruthy Musa

    আমি রুথি মুসা, Wikiofpro.com-এর একজন লেখক। আমি পাঠকদের তথ্য প্রদান এবং অনুপ্রাণিত করার জন্য সাধারণ বিষয়গুলি গভীরভাবে শেয়ার করি। আমার লক্ষ্য হল সঠিক তথ্য এবং ব্যাপক জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা, যাতে তারা আরও সাবলীল এবং সফলভাবে নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে পারে।

    View all posts

Leave a Comment