সার্টিফিকেট একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি যা শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ব্যক্তিগত দক্ষতার প্রমাণ প্রদান করে। চাকরি, উচ্চশিক্ষা, এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে এই নথিগুলি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
তবে, অনেক সময় অসতর্কতা বা অন্য কোনও কারণে এই সার্টিফিকেট হারিয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হয় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি (General Diary) করার, যা স্থানীয় থানায় করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে আপনি হারানো সার্টিফিকেটের বিষয়ে একটি আইনি প্রমাণ রাখতে পারবেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবেন।
এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব কীভাবে সার্টিফিকেট হারানো জিডি লেখার নিয়ম, এর গুরুত্ব এবং এর মাধ্যমে কীভাবে নতুন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা সম্ভব।
সার্টিফিকেট হারানো জিডি করার নিয়ম
সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে প্রথমেই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা উচিত। থানায় জিডি করার প্রক্রিয়া বেশ সহজ হলেও কিছু বিষয়ের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
১. থানায় সরাসরি উপস্থিত হন:
সার্টিফিকেট হারানোর জিডি করতে হলে প্রথমে আপনার স্থানীয় থানায় যেতে হবে। সার্টিফিকেটটি কোথায় হারিয়েছে তার উপর ভিত্তি করে, সেই এলাকার থানায় জিডি করতে হবে।
২. সার্টিফিকেট হারানো জিডি লেখার নিয়ম:
সার্টিফিকেট হারানো জিডি লেখার নিয়ম! থানায় গিয়ে প্রথমে আপনাকে একটি লিখিত আবেদন তৈরি করতে হবে, যেখানে সার্টিফিকেট হারানোর বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করতে হবে। আবেদনে নিচের বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করবেন:
- আপনার পুরো নাম
- পিতার নাম
- বর্তমান ঠিকানা
- হারানো সার্টিফিকেটের নাম এবং সংখ্যা (যদি জানা থাকে)
- সার্টিফিকেটটি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ইস্যু করা হয়েছে
- কবে এবং কোথায় সার্টিফিকেটটি হারিয়েছে
- আপনার কন্টাক্ট নাম্বার
৩. প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে যান:
জিডি করার সময় আপনার পরিচয় প্রমাণের জন্য কিছু নথি প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি থানায় জমা দিতে হতে পারে। এছাড়াও যদি সার্টিফিকেটটির কোনও ফটোকপি থাকে, সেটাও জমা দেওয়া যেতে পারে।
৪. থানার অফিসারের কাছে জিডি জমা দিন:
লিখিত আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি থানার ডিউটি অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে। তিনি আপনার আবেদন পড়ে তা গ্রহণ করবেন এবং জিডি নম্বর প্রদান করবেন। এই জিডি নম্বরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আপনার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
৫. জিডি নম্বর সংরক্ষণ করুন:
জিডি নম্বরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে, কারণ পরবর্তীতে এটি আপনাকে নতুন সার্টিফিকেট পুনরুদ্ধার বা ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট ইস্যু করার জন্য প্রয়োজন হবে।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ
আপনাকে প্রথমে জিডির একটি কপি নিয়ে যেতে হবে একটি জাতীয় দৈনিকের অফিসে। সেখানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে জানাতে হবে যে আপনি সার্টিফিকেট হারানোর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চান।
এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলি সঠিকভাবে দিতে হবে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে: জিডি নম্বর, সার্টিফিকেটে উল্লিখিত পরীক্ষার নাম, বোর্ডের নাম, পাশের সাল, যার সার্টিফিকেট হারিয়েছে তার নাম এবং সার্টিফিকেটটি কীভাবে হারানো হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ। বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ হলে, পত্রিকা থেকে সেই অংশ কেটে রাখতে হবে পরবর্তী ব্যবহারের জন্য।
আরও জানুন: ঘরে বসেই অনলাইন জিডি করার নিয়ম
শিক্ষাবোর্ডে আবেদন প্রক্রিয়া
সার্টিফিকেট পুনরুদ্ধারের জন্য প্রথমে সার্টিফিকেটের ফি পরিশোধ করা জরুরি। এই ফি জমা দেওয়ার জন্য শুধুমাত্র অনলাইন সোনালী সেবা ব্যবহার করতে হবে। নগদ অর্থ, পোস্টাল অর্ডার বা ট্রেজারি চালান আর গ্রহণ করা হয় না।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে সোনালী সেবায় ফি জমা দেওয়ার ফরম পাওয়া যাবে। ফরমটি পূরণ করে সেভ করলে জমা দেওয়ার ফরম তৈরি হবে। সেটি প্রিন্ট করে সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দিলে দুটি রশিদ দেওয়া হবে—একটি প্রদানকারীর জন্য এবং অপরটি বোর্ডের জন্য।
আরও আর্টিকেল: ডিভোর্স পেপার লেখার নিয়ম
আবেদনপত্র জমা দেওয়া
সার্টিফিকেট পরীক্ষাটি যে শিক্ষাবোর্ডের অধীনে হয়েছে, সেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যেতে হবে। শিক্ষাবোর্ডের তথ্যসংগ্রহ কেন্দ্রে গিয়ে সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। এরপর সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে আবেদনপত্রটি জমা দিতে হবে।
আবেদনপত্রের উপরে ইআইআইএন নম্বরটি ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটের হোম পেজ থেকে পাওয়া যাবে। আবেদনকারীর পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্য ও ব্যক্তিগত বিবরণ প্রদান করতে হবে, পাশাপাশি সোনালী সেবা নম্বরও দিতে হবে যা আবেদনকারীর জমা রশিদে উল্লেখ থাকে।
আবেদনপত্রটি সকল আবেদনকারীর জন্য, নিয়মিত ও অনিয়মিত উভয় ধরনের, তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে।
অবশেষে, আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সংযুক্ত করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে: জিডির কপি, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কাটা অংশ এবং বোর্ডের নির্ধারিত ফি জমার রশিদ।
যদি সার্টিফিকেট কোনো কারণে আংশিক বা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে জিডি করা বা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। নষ্ট হয়ে যাওয়া সার্টিফিকেট নিয়ে পরবর্তী ধাপগুলো সম্পন্ন করা যাবে।
প্রয়োজনীয় খরচ
শিক্ষা সনদের দ্বি-নকল নেওয়ার জন্য ৫০০ টাকা ফি প্রযোজ্য। ত্রি এবং চৌ-নকলের ক্ষেত্রে খরচ হবে ৭০০ টাকা।
উপসংহার:
শিক্ষা সনদপত্রের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সনদ যখন ইস্যু করা হয়, তখনই অফসেট কাগজে এর বেশ কয়েকটি অনুলিপি তৈরি রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
সঠিক যত্ন নেওয়া হলে হারিয়ে যাওয়ার বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরিণামে সময় ও অর্থের অপচয় থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আজকের আলোচনার বিষয় ছিল সার্টিফিকেট হারানো জিডি লেখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা। আশাকরি, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আপনারা উপকৃত হবেন।
আরও জানুন:
- স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম
- স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম
- কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম
- কি কি রোগ থাকলে সরকারি চাকরি হয় না?
- মামলা থাকলে কি সরকারি চাকরি হয়?
- বাংলাদেশ থেকে ভারতে মেডিকেলে পড়ার যোগ্যতা
- মামলা থাকলে কি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যায়?
- জিডি প্রত্যাহার করার নিয়ম
- পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে জিডি করার নিয়ম
- মোবাইল হারিয়ে গেলে জিডি করার নিয়ম
- ঘরে বসেই অনলাইন জিডি করার নিয়ম
DISCLAIMER
এই ব্লগ পোস্ট আর্টিকেল এবং আমাদের স্যোসাল মিডিয়া একাউন্ট এর তথ্য সম্পূর্ন নিরাপদ, যাচাই করা, বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে রিসার্স করে সবার উপকারের জন্য নেওয়া হয়েছে। আমরা বন্ধ পরিকর আপনাদের কে নির্ভুল নিতে, তারপর ও যদি আপনাদের কোন অভিযোগ ও কোন বেপার জানার থাকে আমাদের কে মেইল করুন [email protected] ধন্যবাদ।
WhatsApp চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
Telegram চ্যানেল এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
Facebook Page এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
Quora তে আমাদের কে ফলো করুন- | Follow Us |
Pinterest এ আমাদের কে ফলো করুন- | Follow Us |
Twitter এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
Web Stories এ আমাদের কে ফলো করুন | Follow Us |
TikTok চ্যানেল ফলো করে রাখুন | Follow Us |