বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়া অনেক সহজ এবং নিরাপদ। চাকরি, পড়াশোনা কিংবা ভ্রমণের জন্য মালয়েশিয়ায় যেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট নিয়ম ও প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করতে হবে। অবৈধ উপায়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ এবং ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই সঠিক উপায়ে সরকারিভাবে কীভাবে মালয়েশিয়া যাওয়া যায়, তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হলো।
মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় দেশ যেখানে বহু বাংলাদেশি কাজ, পড়াশোনা এবং বসবাসের জন্য যান। কিন্তু প্রশ্ন হলো, “সরকারি ভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার উপায় কী?” আজকাল অনেকেই বিভিন্ন অসাধু এজেন্সির মাধ্যমে প্রতারিত হন। তাই সরকার অনুমোদিত এবং বৈধ উপায়ে যাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।
আপনি কি জানেন যে সরকারি ভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনেক সুবিধা আছে? যেমন—নিরাপত্তা, বৈধ নথিপত্র, এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিত হওয়া। চলুন জেনে নিই কীভাবে আপনি মালয়েশিয়া যেতে পারেন বৈধ সরকারি পদ্ধতিতে।
সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার উপায় ২০২৫
সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যেতে হলে নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। আপনি যদি মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে কাজ করতে চান, তবে আপনাকে বিএমইটি (BMET) রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে। এছাড়া, পড়াশোনা কিংবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেতে হলে স্টুডেন্ট ও টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রধান পদ্ধতি
১. বিএমইটি (BMET) রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে
2. রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে (অনলাইন রেজিস্ট্রেশন)
3. আমি প্রবাসী অ্যাপের মাধ্যমে
মালয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার নিয়ম
মালয়েশিয়ায় যেতে হলে অবশ্যই একটি বৈধ ভিসা থাকতে হবে। আপনি তিনটি প্রধান উপায়ে মালয়েশিয়া ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন:
১. বিএমইটি (BMET) রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে
মালয়েশিয়া যেতে হলে বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন আবশ্যক। প্রতিটি জেলায় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (BMET) কার্যালয় রয়েছে। এখানে গিয়ে আপনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারেন। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার পর আপনাকে মালয়েশিয়া ই-ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
২. রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে (অনলাইন রেজিস্ট্রেশন)
বিশ্বস্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেও মালয়েশিয়া যেতে পারেন। বিএমইটি রেজিস্ট্রেশনের পর মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ভিসা ফরম ডাউনলোড করে পূরণ করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ভিসা ফি জমা দিয়ে ভিসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
৩. আমি প্রবাসী অ্যাপের মাধ্যমে
যারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে মালয়েশিয়া যেতে চান, তারা ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
- গুগল প্লে স্টোর থেকে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করুন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে জমা দিন।
- ভিসা যাচাই ফি ৩০০ টাকা বিকাশে পরিশোধ করতে হবে।
- ভিসা প্রসেসিং ৩ দিনের মধ্যে শুরু হবে।
- নিয়মিত লগইন করে চাকরির জন্য আবেদন করুন।
সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যেতে যেসব কাগজপত্র লাগে
সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যেতে হলে আপনার নির্দিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে। এগুলো হল:
- মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
- BMET Registration Card
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- করোনা ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট
- কোম্পানির অফার লেটার (কাজের জন্য)
- কোম্পানির কাজের চুক্তিপত্র
- স্কিল সার্টিফিকেট (যদি প্রয়োজন হয়)
- কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ (যদি প্রয়োজন হয়)
- ন্যূনতম ২ বছরের মেয়াদি পাসপোর্ট
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
মালয়েশিয়া যাওয়ার আনুমানিক খরচ
অনেকেই জানতে চান মালয়েশিয়া যেতে মোট কত টাকা খরচ হয়? এখানে আনুমানিক একটি হিসাব দেওয়া হলো:
খরচের ধরন | পরিমাণ (টাকা) |
পাসপোর্ট ফি | ৪,০০০-৬,০০০ |
মেডিকেল পরীক্ষা | ৭,০০০-১০,০০০ |
ভিসা প্রসেসিং | ১৫,০০০-২৫,০০০ |
বিমানের টিকেট | ৪০,০০০-৬০,০০০ |
অন্যান্য খরচ | ৫,০০০-১০,০০০ |
মালয়েশিয়া যেতে কত বছর বয়স লাগবে?
সরকারিভাবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে মালয়েশিয়া যেতে চাইলে বয়স হতে হবে ২১ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য কাজ পাওয়া কঠিন। আর ২১ বছরের নিচে কেউ কাজের জন্য মালয়েশিয়া যেতে পারবে না।
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া যেতে কত সময় লাগে?
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রধান মাধ্যম হলো বিমান। মালয়েশিয়ার দূরত্ব প্রায় ৩,৭৪৮ কিলোমিটার।
- বিরতিহীন (ননস্টপ) ফ্লাইটে মালয়েশিয়া যেতে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা।
- ওয়ান স্টপ ফ্লাইটে যেতে সময় লাগতে পারে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা।
অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে গেলে সময় বেশি লাগে এবং ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই সরকারিভাবে বৈধ উপায়ে যাওয়াই উত্তম।
সরকারি ভাবে বিনা খরচে মালয়েশিয়া কলিং ভিসা পাওয়ার নিয়ম
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হল “মালয়েশিয়া কলিং ভিসা” যা সম্পূর্ণ বিনা খরচে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি নির্দিষ্ট সরকারি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্ত মেনে আবেদন করতে হয়।
কলিং ভিসা কী?
মালয়েশিয়া কলিং ভিসা মূলত একটি কর্মসংস্থান ভিত্তিক ভিসা, যা মালয়েশিয়ার সরকার অনুমোদিত নিয়োগকর্তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ইস্যু করা হয়। এই ভিসার মাধ্যমে একজন কর্মী বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় গিয়ে কাজ করার সুযোগ পান।
সরকারি ভাবে বিনা খরচে কলিং ভিসা পাওয়ার ধাপসমূহ
১. বিএমইটি-তে নিবন্ধন:
- প্রথমেই বিএমইটি (Bureau of Manpower, Employment and Training) এর ওয়েবসাইটে (www.bmet.gov.bd) গিয়ে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করতে হবে।
- নির্ধারিত ফি পরিশোধের প্রয়োজন নেই, এটি সরকারি ভাবে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়।
নিয়োগ সংস্থার যাচাই:
- সরকার অনুমোদিত নিয়োগকর্তা বা রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
- প্রতারক দালালদের মাধ্যমে কোনো ধরণের আবেদন না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মেডিকেল পরীক্ষা:
- নির্দিষ্ট মেডিকেল সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে কর্মীর ফিটনেস যাচাই করা হয়।
- মেডিকেল রিপোর্ট পজিটিভ হলে আবেদন পরবর্তী ধাপে গৃহীত হয়।
ভিসা অনুমোদন ও ট্রেনিং:
- মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক ভিসা অনুমোদন পাওয়ার পর আবেদনকারীকে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং প্রদান করা হয়।
- প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর চূড়ান্ত কাগজপত্র হস্তান্তর করা হয়।
টিকিট ও ফ্লাইট:
- নির্দিষ্ট তারিখে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে বিমান টিকিট প্রদান করা হয়।
- কর্মীদের মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তা তাদের গ্রহণ করেন।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
- প্রার্থীকে ১৮-৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- শারীরিকভাবে সুস্থ ও কর্মক্ষম হতে হবে।
- সংশ্লিষ্ট পেশায় অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
সতর্কতা ও প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়
- শুধুমাত্র সরকার অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
- কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- প্রতারণার শিকার হলে নিকটস্থ শ্রম ও কর্মসংস্থান অফিসে অভিযোগ জানানো উচিত।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
প্রশ্ন ১: সরকারি অনুমোদিত মাধ্যমে মালয়েশিয়া যেতে কতদিন সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণত ৩-৬ মাস সময় লাগে। তবে নির্ভর করে কাগজপত্র এবং প্রসেসিংয়ের ওপর।
প্রশ্ন ২: কি ধরনের চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়?
উত্তর: সাধারণত নির্মাণ, কৃষি, উৎপাদনশিল্প, হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও গৃহকর্মীর কাজ বেশি পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ৩: অবৈধভাবে গেলে কি সমস্যা হতে পারে?
উত্তর: অবৈধভাবে গেলে ডিপোর্টেশন, জরিমানা বা জেল হতে পারে। তাই সরকারি অনুমোদিত পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
শেষ কথা।
সরকারি ভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার উপায় অবলম্বন করাই সবচেয়ে নিরাপদ এবং সুবিধাজনক। যদি আপনি মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে কাজ বা পড়াশোনা করতে চান, তবে উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করুন। সতর্ক থাকুন, প্রতারকদের ফাঁদে পা দেবেন না।
সরকারিভাবে মালয়েশিয়া যাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী উপায়। বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন, রিক্রুটিং এজেন্সি ও আমি প্রবাসী অ্যাপের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যেতে পারবেন। কিন্তু অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে গেলে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই সঠিক উপায়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে মালয়েশিয়া ভিসার জন্য আবেদন করুন এবং নিশ্চিন্তে বিদেশ পাড়ি দিন।
বিঃদ্রঃ মালয়েশিয়ার ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে স্থানীয় বিএমইটি অফিস কিংবা বিশ্বস্ত রিক্রুটিং এজেন্সির পরামর্শ নিন।
আমি কি ভাবে যেতে পারি
Good information.thakyou